বেক্সিমকো গ্রুপে ক্যারিয়ার শুরু করে শাইনপুকুর সিরামিকসে ক্যারিয়ার জীবনের পাঁচ বছর অতিক্রম করেছেন তিনি। এরপর বেক্সিমকো ছেড়ে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সিরামিকসের টেবিলওয়্যার প্রতিষ্ঠান স্টার পোরসেলিনের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং বিভাগে প্রায় এক বছর কাজ করার পর মুন্নু সিরামিকসে ইন্টারন্যাশনাল সেলস এবং মার্কেটিং বিভাগে সিনিয়র ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। দীর্ঘ সময় ধরেই মুন্নু সিরামিকসের হেড অব ব্র্যান্ড এবং রিটেইল অপারেশনসের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার সফলতা, অভিমত, ক্যারিয়ারের গল্প এবং ব্র্যান্ড মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার নানান দিক নিয়ে লিখেছেন-সোহানা রহমান
ছেলেবেলার বিশাল একটা অংশ কাটে মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অঙ্গনে। সেখান থেকে কৈশোরে পা ফেলে ২০০১ সালে মাধ্যমিক পেরিয়ে ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হন। এরপর ধানমন্ডির ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০৮ সালে ব্যবসা প্রশাসনে মার্কেটিংয়ের ওপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এতক্ষণ যার গল্প বললাম, তিনি হলেন খন্দকার ফয়েজ আহমেদ। বর্তমানে মুন্নু সিরামিকসের হেড অব ব্র্যান্ড এবং রিটেইল অপারেশনসের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
স্নাতক শেষ করার পরপরই ইন্টার্নশিপ পেয়ে যান বেক্সিমকো গ্রুপে। ক্যারিয়ার শুরু করতে এরপর আর খুব বেশি একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে। বলা যায়, ক্যারিয়ারের বাঁক বদল এখান থেকেই। বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকসে পাঁচটি বছর কাটান তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরু ও প্রথম ধাপ পেরোনো ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং বিভাগের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। বলা যায়, ব্র্যান্ডিংয়ের হাতেখড়ি তখন থেকেই। সেই হাতেখড়িই পরবর্তীতে ক্যারিয়ার গঠনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে বলে তিনি মনে করেন।
বেক্সিমকো ছেড়ে ২০১৫ সালের শুরুতে আরএকে সিরামিকসের টেবিলওয়্যার প্রতিষ্ঠান স্টার পোরসেলিনের সাথে যুক্ত হন। সেখানে প্রায় এক বছরের মতো কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ডিং বিভাগে। তারপর সেখান থেকে এসে মুন্নু সিরামিকসে ইন্টারন্যাশনাল সেলস এবং মার্কেটিং বিভাগে সিনিয়র ম্যানেজার পদে যোগদান করেন তিনি। তারপর ২০১৭ সালে সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ব্র্যান্ড বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০২০ সালে উপ-মহা ব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। তারপর কোম্পানির রিটেইল অপারেশন দেখভাল করার গুরুদায়িত্ব পরে তার ওপর।
১৯৮৪ সালে মুন্নু সিরামিকস যাত্রা শুরু করেন। দেশের প্রথম সিরামিক কোম্পানি। মূলত এ কোম্পানির হাত ধরেই ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে রফতানি শুরু হয়। ৩৬ বছর ধরে এ ব্র্যান্ড তাদের পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে পৃথিবীর ৫০টিরও বেশি দেশে। বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের সিরামিকের পণ্য তৈরির ধারাবাহিকতায় সর্বোচ্চ ১২ বার জাতীয় রফতানি ট্রফি অর্জন করে মুন্নু সিরামিক। দেশের বাজারে গত তিন যুগ ধরে মানুষের ঘরে ঘরে, উৎসব আয়োজনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই ব্র্যান্ড গতবছর বেস্ট টেবিলওয়্যার সিরামিক ব্র্যান্ড ক্যাটাগরিতে অর্জন করে ‘সুপারব্র্যান্ডস’।
দ্রুত চাকরি বদল সব সময় ক্যারিয়ারের জন্য শুভকর নয় বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কারণ সবার মূল্যায়ন করা হয় কাজ ও যোগ্যতার মাধ্যমে। তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রথম চাকরিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মজবুত হলে, এর পাশাপাশি যেকোনো কিছু করা সম্ভব। সেজন্য প্রতিদিন নতুন কাজ খুঁজে খুঁজে শিখুন। যে কাজটাই করেন, মন দিয়ে করেন। আর মনে রাখবেন, শেখার কোনো বিকল্প হয় না।
তিনি আরো বলেন, তিন বছরের আগে কোথাও জব না ছাড়ার অভ্যাস করবেন। তাহলে ক্যারিয়ার অনেক সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে। ঘনঘন চাকরি বদল করলে আপনার ব্যাপারে বাজে ধারণা তৈরি হতে পারে। আরেকটি বড় ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, নিজেকে সময়ের সাথে সাথে সব কিছুতেই আপডেটেড রাখতে হবে। কখনোই ব্যাকডেটেড হওয়া যাবে না। নয়তো আপনি মার্কেট থেকে ছিটকে পড়বেন। সবশেষে বলবো, প্রথমে লার্ন তারপর আর্ন।
ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এ সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ প্রতিযোগিতা এবং প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর মার্কেট পজিশন ধরে রাখার ব্যাপারে সচেতনতা। ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রচুর সমসাময়িক কেস স্টাডি রিসার্চ করতে হবে। এখানে নতুনদের কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। সৃজনশীলতা, নিত্যনতুন আইডিয়া, মার্কেট স্টাডি, কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস- ব্যাপারগুলো একজন তরুণের মধ্যে থাকলে; তার জন্য ব্র্যান্ডিংয়ে ক্যারিয়ার গড়া অনেক সহজ হবে।
সাথে সাথে এও মনে রাখতে হবে এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি বিভাগ। যেখানে প্রতিনিয়ত আপনার কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের ওপর কাস্টমারের গচ্ছিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন মাত্রা দেওয়াই হলো ব্র্যান্ডিংয়ের মূল কাজ। কারণ দিনশেষে একটি কোম্পানির সফলতার পেছনে মূল কাজটি করে সঠিক ব্র্যান্ডিং।