‘না’ পাওয়ার বেদনার মধ্য থেকেই শিক্ষকরা গতকাল বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করেছেন। একেক সংগঠন একেক সময় নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করে। এ সময় কোনো সংগঠন বলেছে শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আবার কোনো সংগঠন বলেছে, নির্বাচনের আগেই বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন শিক্ষকরা। শিক্ষক দিবসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনেরও দাবি জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। দিনের শুরুতে রাজধানীর আর্মি গলফ গার্ডেন অডিটোরিয়ামে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতি এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পাঁচ শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। তারা হলেন অধ্যক্ষ হরেন্দ্রনাথ নাথ, বরুণ কুমার দত্ত, অধ্যাপক ড. ফিরোজা সুলতানা, শামছ উদ্দীন আহমদ মাস্টার, ডা. মির্জা মনজুরুল হক।
পরে মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, দেশে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তবে সব শিক্ষককে বিদেশে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজেদের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন তারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এ জন্য কারিগরি শিক্ষাকে আমরা অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে নিতে সরকার উদ্যাগ নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সব জেলায় নারীদের জন্য স্পেশাল কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি হয়ে গেছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হবে। তিনি আরো বলেন, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকই পারে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে। এর জন্য শিক্ষকদের সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন আরো দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে নতুন প্রজন্মকে আধুনিক ধারায় এনে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম জাকির হোসেন ভূঞা। আরো বক্তব্য দেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, টেকনিক্যাল এডুকেশন কনর্সোটিয়াম অব বাংলাদেশের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আজিজ প্রমুখ।
শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার মান নিশ্চিত হবে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের দাবি পূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবুল বাশার হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপাচার্য আরো বলেন, শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। এসডিজি অর্জন করতে হলে শিক্ষা পরিবারের কোনো অংশকে বঞ্চিত বা অবহেলিত রাখা যাবে না।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. জসিম উদ্দিন সিকদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স, যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফরহাদ কবির।
নির্বাচনের আগেই ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা : আগামী নির্বাচনের আগেই শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার টাকা চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে স্বাধীনতা শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় শিক্ষক নেতারা এমন আশার বাণী শুনিয়েছেন শিক্ষকদের।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাবদ ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈশাখী ভাতা ২০০ কোটি টাকা আগামী নির্বাচনের আগেই শিক্ষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছাবে। আমরা চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রী নিজের মুখে এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর মাহবুব আলী, শিক্ষক নেতা প্রফেসর মো. সাজিদুল ইসলাম, সাঈদুর রহমান পান্না, অধ্যক্ষ মোনতাজ উদ্দিন মর্তুজা, আবদুল্লাহ আল মামুন, কামরুজ্জামান, একেএম ওবায়দুল্লাহ, তেলোয়াত হোসাইন, হরিচাঁদ মণ্ডল সুমন, হারুন অর রশীদ, নারায়ণ চন্দ্র দাস, শাহজাহান খান, মাওলানা সামসুল আলম প্রমুখ।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি : বিশ্ব শিক্ষক দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখে শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হচ্ছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সেগুনবাগিচার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তারা এ দাবি জানান। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশ্ব শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মাহফুজা খানম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহসভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম, আলী আসগর হাওলাদার, মো. ইকবাল হোসেন, মণি হালদার, বেগম নূরুন্নাহার, অশোক কান্তি গুহ, হেনা রানী রায়, আবু জামিল মো. সেলিম ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।