• শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ | ১৫ চৈত্র ১৪৩১ | ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নতুন গল্পের কবি

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ৬ অক্টোবর, ২০১৮

গণিতের ভাষা বলে ‘দুই দুগুণে চার’। কিন্তু ‘দুই দুগুণে এক’ও হয়- এমন ধারণাকে গল্পে গল্পে উপস্থাপনার প্রয়াস চালিয়েছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় গল্পকার আরণ্য সুজন। তিনি একই শিরোনামে দশটি ছোটগল্প নিয়ে বইটি সাজিয়েছেন। প্রতিটি গল্প কাল্পনিক হলেও লেখক পাঠকের চাহিদা, সময় ও সমসাময়িক বিষয়গুলো মাথায় রেখে গল্পগুলো তুলে ধরেছেন। ‘মা’কে উৎসর্গকৃত গল্পের বইটিতে ‘মা’ শিরোনামে একটি গল্প প্রথমেই স্থান করে নিয়েছে। ছোট ছেলে ও মায়ের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া গল্পটি যেন প্রতিটি স্নেহময়ী মাকেই নির্দেশ করে। মায়েরা ছেলেদের জন্য মাটির ব্যাংকে, বালিশের নিচে, শাড়ির আঁচলে টাকা জমিয়ে ছোট ছেলেকে না দিয়ে বড় ছেলেকে দেয়, এ যেন ধ্রুব সত্য। আর ছেলের বিপদে মায়েরা যেন সবসময়ই পাশে থাকতে চায়। এই গল্পে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে হাত কেটে রক্ত ঝরিয়ে ছেলের জন্য সমবেদনা জানানো যায়।

মাত্র ৯৬ পৃষ্ঠার গল্পগ্রন্থটিতে ‘ক্রসফায়ার’ শিরোনামে একটি গল্প জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমান সময়ে ক্রসফায়ারের মতো বিষয়টিকে গল্পের আবরণে তুলে ধরা প্রশংসার দাবি রাখে। গল্পটি পড়ে পাঠকহূদয়ে ক্রসফায়ারজনিত ভীতি দূরীভূত হবে। ‘যে অশ্রুতে আগুন ঝরে’ শিরোনামের গল্পটিতে লেখক রাজনীতির কিছু প্রসঙ্গ টেনেছেন। ‘নীল’ নামের একটি চরিত্রের আগমন ঘটিয়ে সময়োপযোগী সংলাপ গল্পটিকে অনন্যমাত্রায় নিয়ে গেছে : ‘নীল, তুমি অনেক ছোট ছেলে...।’ ‘আমি বয়সে ছোট হলেও সাহসে আপনার চেয়ে বড়’— এমন জবাবে রাজনৈতিক নেতা ক্ষেপে উঠলেও পরিণামে নীলের ডান হাতের মুষ্টির আঘাতে সমাজের দুশ্চরিত্রবান ব্যক্তির অবসান হয়। তরুণ পাঠকদের গল্পটি সত্যি অনুপ্রেরণার মাধ্যম হবে।

আমাদের পরিবেশ দূষণের অন্যতম একটি পদার্থ হলো— পলিথিন। এমন বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে সুদীর্ঘ একটি গল্প ‘পলিথিনের সিংহবধ’ যেন গল্পসাহিত্যের এক ভিন্নরূপ মাত্র। লেখকের জবানিতে গল্পের কথোপকথন, প্রকৃতি-পরিবেশ আত্মস্থ করে ভাবনার উদয় করা, বড় কথা বন্যপ্রাণী শিয়ালের মুখ থেকে কথা শোনার অভিপ্রায় ঘটানো হয়েছে। শেয়াল লজ্জা পেয়ে বলছে, ‘এখানে ফল খুব কম পাওয়া যায়। অনেক দাম ফলের..।’ মোটের ওপর কাল্পনিক আভাসে গড়ে ওঠা গল্পটি পাঠোপযোগী মনে হয়েছে। আরেকটি গল্পের কথা এ পরিসরে না বললেই নয়। ‘পুতুল খেলা’ শিরোনামে লেখক একটি গল্প তুলে ধরেছেন। খুলনা শহরের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অবন্তিকা। এ চরিত্রের মধ্য দিয়ে আকস্মিক দেশপ্রেমের আভাস দেওয়া হয়েছে তরুণ প্রজন্মকে। অবন্তিকা পুতুল খেলার ছলে অনেক কিছু আবিষ্কার করে ফেলে। অবন্তিকা লক্ষ করে, পুতুলটির বুকে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা। মানচিত্রের মাঝখানে লালকালিতে লেখা— ‘বাংলাদেশ’। কিসের পুতুল, কোথাকার পুতুল, এসব আর বলছি না। গল্পটি পড়ার মধ্য দিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করার আহ্বান করছি।

এ গল্পগ্রন্থে আরো রয়েছে— ‘স্বপ্ন চুরি’, ‘ফাঁদ’, ‘নদীপাড়ে রহস্যের ঢেউ’, ‘যুদ্ধশিশু’ ও ‘তেলবাজি’। সব গল্পই পাঠযোগ্য। ‘তেলবাজি’ গল্পটি লেখক অসমাপ্ত রেখেছেন। ক্ষুদ্র এ আলোচনায় মনে হতে পারে বইয়ের শিরোনাম কেন ‘দুই দুগুণে এক’ করা হলো। কিংবা এই শিরোনামে কেন কোনো গল্প নেই? আসলে লেখক ভাবের অবতারণার তাগিদে গল্পগ্রন্থটির নামটি একটি আর্কষণীয় করে রেখেছেন। তবে এখানেও ‘কিন্তু’ রয়েছে। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা অনিয়মের বেড়াজালে পড়ে হিসাব-নিকাশ বদলাতে শুরু করেছে। প্রভাবশালীরা নয়-ছয় করেই চলেছে। তারা এখন এমনই হিসাব কষে ‘দুই দুগুণে এক’। আশা করছি, বইটি পাঠের মাধ্যমে পাঠকের চেতনায় এই সমাজের সঙ্গতি-অসঙ্গতি নতুনভাবে ধরা দেবে। মৌসুমী বই প্রকাশনার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে তরুণ এই লেখক পাঠকদের নতুন একটি স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে তাকে ধন্যবাদ জানাই। ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads