একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিলে পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে করা আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের এই নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী এ আবেদন করেন।
পিটিশনারের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। রিটে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নিবন্ধন নেই। এমন একটি দলের নেতারা কী করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন?
২০০৮ সালের ১ আগস্ট তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিটে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন।
বাদী রিটে উল্লেখ করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই জোটের শরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। ২০-দলীয় শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে ২৫ আসন দেওয়া হয়েছে। যদিও জামায়াতকে আসন বণ্টনের শুরুতে ২৫ আসনে ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। এ নিয়ে জামায়াতে চাপা ক্ষোভও বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াত এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট করে দুই আসনে জয়ী হয়। জোটের সিদ্ধান্তে দশম নির্বাচন বয়কট করে দলটি।
রিটে বলা হয়, ‘ইদানিং বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করে। তাদেরকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যা আইনগত বৈধ নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির, সেক্রেটারি জেনারেল ও মনোনীত ২৫ প্রার্থীসহ মোট ২৯ জনকে বিবাদী করা হয়।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর শুনানিতে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওই রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে। হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি) (২) ও ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থি। সেই রায় এখনো বহাল রয়েছে। তবে এ বিষয়ে তখনো কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। এতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আওতায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। দলটির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪। ১৭ ডিসেম্বর করা রিটে জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন জানানো হয়। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে নিষ্পত্তি না হলে তিনি রিট করেন।
রিটকারীর আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নেই। নিবন্ধনহীন একটি দলের প্রার্থীরা কীভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হন- এ যুক্তিতে রিটটি দায়ের করা হয়েছে। আমরা সেখানে বলেছি, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই, তাই ওই দলের কোনো নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না, সেহেতু অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই।
রিটে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর নাম এবং আসন উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতের আরো ৩ আসনে দলটির প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।