ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব এখনো কাটেনি। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের পর সারা দেশের মতো এখানে প্রচার চললেও আলোচিত এই দুই প্রার্থী এখন টানাহেঁচড়ায় আছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থিতা নিয়ে। জামাই রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে থাকলেও সিংহ প্রতীক পাওয়া শ্বশুর জিয়াউল হক মৃধাও নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করছেন। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এই দুই নেতার নির্বাচনী পোস্টারেও লেখা রয়েছে ‘মহাজোট মনোনীত প্রার্থী’।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। মহাজোটের প্রার্থিতা নিয়ে জামাই-শ্বশুরের টানাটানিতে বিভ্রান্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট শরিক অন্যান্য দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। যদিও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন। মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে জামাই-শ্বশুরের টানাটানির মধ্যে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার দলে ভিড়েছে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এবারো দলীয় মনোনয়নের জন্য শুরু থেকেই চেষ্টা চালান। এর মধ্যে দলীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দলের মনোনয়ন পেতে সক্ষম হন। জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্বাক্ষরসহ প্রত্যয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি। অপরদিকে জিয়াউল হক মৃধা সে সময় দলীয় প্রত্যয়ন না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তিনি ১০ ডিসেম্বর লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ চেয়েছিলেন, কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেখতে চাইলে ব্যর্থ হন। তখন সিংহ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় তাকে।
এর মধ্যে দলের মহাসচিবের পদ হারান রুহুল আমিন হাওলাদার। এ পদে দায়িত্ব পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গার স্বাক্ষর করা দলের চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি পান জিয়াউল হক মৃধা। যতক্ষণে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তা দাখিল করেন, ততক্ষণে সময় পেরিয়ে যায়।
এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে যে ২৯টি আসন জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে জিয়াউল হক মৃধার নাম রয়েছে। সেই জোরে এখন ভোটের প্রচারে তিনি বলছেন, ‘সিংহ-ই লাঙ্গল, সিংহ-ই নৌকা।’
অন্যদিকে তার জামাতা রেজাউল বলছেন, আইন লঙ্ঘন করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জিয়াউল হক মৃধা। তার মন্তব্য, উনি (মৃধা) স্বতন্ত্র প্রার্থী, কোনো দলীয় প্রার্থী নন। বাংলাদেশে যে আইনে নির্বাচন হয় (আরপিও) সেখানে বলা আছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা স্বতন্ত্রই থাকবে, তারা দল এবং জোটের প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জিয়াউল হক মৃধার বক্তব্য হলো, প্রতীক স্বতন্ত্র হলেও মহাজোট তালিকায় তার নামই আছে। এখন পর্যন্ত তিনিই মহাজোট প্রার্থী। তিনি বলেন, জনগণ মনে করবে যে, সিংহ-ই লাঙ্গল, সিংহ-ই নৌকা।
লাঙ্গল প্রতীক পাওয়া রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া শ্বশুরের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও ভাবছেন। তিনি বলেন, উনি (মৃধা) মনোনয়ন ফরমে স্বতন্ত্র প্রার্থী লিখে জমা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এখন কোনো বিবেচনায় যদি উনি দাবি করে থাকেন তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে উনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে, এখানে আমার কিছু বলার নেই।
‘দেশের আইন রক্ষার জন্য যেকোনো নাগরিক যেতে পারেন। আমিও যেতে পারি। মহাজোটের নেত্রীর ছবি বা জোটের নেতা এরশাদ সাহেবের ছবি ব্যবহার করলে উনাদের যেহেতু প্রার্থী এখানে আছে, এটা একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থা, এই ব্যাপারেও রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ব্যবস্থা নেবেন।’ যোগ করেন রেজাউল।
জিয়াউল হক মৃধা লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পেতে আপিল করেও ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে রেজাউল বলেন, হাইকোর্টের আদেশ যদি লঙ্ঘিত হয় সেটা হাইকোর্ট বিবেচনা করবেন যে তাদের আদেশ লঙ্ঘিত হয়েছে। আমার মাথা ব্যথার কারণ নেই।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা দাবি করেন, অধিকাংশ নেতাকর্মীই তার পক্ষে আছেন। এলাকায়ও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। ভোটে তিনিই জয়ী হবেন।
এদিকে গত রোববার আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউল হক মৃধার মহাজোট প্রার্থী ঘোষণার প্রতিবাদ জানোনো হয়েছে। একইসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিনের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন দাবি করে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মাঠে যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ ৩০ তারিখে জয়যুক্ত হব। আমার সাথে আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করছে।
এদিকে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া। এই আসন থেকে দুবার সাংসদ নির্বাচিত সাত্তার ভূইয়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। এবার মহাজোটের প্রার্থী জটে ভোটে তারই লাভ হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।