ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন ও দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোট গ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে পাঠানোসহ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। এসব এলাকায় সব ব্যাংক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্বাচনী এলাকায় গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টা ইঞ্জিনচালিত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে মহাসড়ক ও আন্তঃজেলা ও মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক, প্রধান সংযোগ সড়কে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে বলে ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ পদে আওয়ামী লীগসহ চারটি রাজনৈতিক দলের চারজন ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। দলীয় প্রতীকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদ লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম টেবিল ঘড়ি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আনিসুর রহমান দেওয়ানের প্রতীক আম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান বাঘ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৬ প্রার্থী ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪৫ প্রার্থী লড়ছেন। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২৫ প্রার্থী এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এ সিটিতে ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ২৯৫টি ও ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৪৮২টি। ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও নারী ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। উত্তরে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ড ১৮টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছয়টি। এসব ওয়ার্ডে ভোটার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন ও নারী ২ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন। ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি ও ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৫২। এই দুই সিটি নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে রয়েছে র্যাবের ২৭টি ও বিজিবির ২৫ প্লাটুন সদস্য। নির্বাচনের আচরণবিধি প্রতিপালন ও অনিয়মের শাস্তি প্রদানে ৫৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, অবস্থা যদি অনুকূলে না থেকে প্রতিকূলে থাকে এবং কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা কেন্দ্র বন্ধ করে দেব।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে দুই সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডেও ভোটের তফসিল দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনী তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট করা হয়। ওই দুটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের বেঞ্চ উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। প্রায় এক বছর পর গত ১৯ জানুয়ারি ওই নির্বাচনের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন আদালত। হাইকোর্টের রুল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। এরপর মেয়র পদে উপনির্বাচনে আর কোনো বাধা ছিল না। ফলে নির্বাচন কমিশন নতুন করে ভোটের তফসিল দেয়।