সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ আর অতিজোয়ারের পানিতে তলিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
পেঁপেসহ শাকসবজির ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে বেশি ও আমনের বীজতলার আংশিক ক্ষতির উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উপকুলীয় বাউফলের ফসল মৌসুমের ২০-২৫ দিনের ব্যাবধান থাকে। এ সময় সমন্বিত সবজিঘেরসহ কৃষক উচু জমির গ্রীষ্মকালিন শাকসবজি তুলেছিলেন। জোয়ারের পানি আর টানা বর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে পেঁপেসহ এই শাক-সবজি। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় সামন্য ক্ষতি ও কিছু পরিমান আংশিক ক্ষতি হবে আমনের বীজতলার।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, বরবটি, করোলা, বেগুন, ধুন্দল, জিঙে, কলমীশাক, পুঁইশাক, পেঁপেসহ অন্তত ২৫০ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালিন শাকসবজি বিনস্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’ জন চাষি। তবে পেঁপে চাষিদের ক্ষতি শতভাগ। এছাড়া শতকরা ১৫ ভাগ পানের বরজের ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। টাকার অঙ্কে শাকসবজির এই ক্ষতির পরিমান ৫ কোটি হবে। ৫ হেক্টর আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ ও ১০ হেক্টর আংশিক ক্ষতি হবে নীচু এলাকায়। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় আমনের বীজতলার ক্ষতির পরিমাণ কমে ১ পার্সেন্টে নামবে।
মমিনপুর গ্রামের সবজি চাষি কাদের ডাক্তার জানান, অমাবস্যা লাগোয়া সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে ৫-৬ দিনের টানা বৃষ্টিপাত আর তেঁতুলিয়া-লোহালিয়া নদীর অতি জোয়ারের পানিতে উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চলে ২০ হাজার হেক্টর আমনের বীজতলাসহ কয়েক শ’ পুকুর, মাছের ঘের ও বিপুল পরিমাণ সমন্বিত শাকসবজির ঘের-বাগান ভেসে যায়। চর ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এখন সূর্য উকি দিয়ে জোয়ারের চাপ কমে পানি নামতে থাকায় শুকিয়ে শাক-সবজি গাছ মরে যাচ্ছে। এতে শাক-সবজি চাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
তিনি আরো জানান, জৈষ্ঠের শেষ ও আষাঢ়ের শুরুর দিকে টানা বর্ষণে নষ্ট হওয়ায় কয়েক দফায় শাক-সবজির বীজ লাগাতে হয়েছে। এবার জোয়ারের পানি আর ভারি বর্ষণে মাঠঘাট, সবজির বাগান ভেসে যাওয়ায় নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের সবজি চাষি। অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালবার্ট, স্লুইজগেট তৈরী ও নদী-খাল ভরাট হওয়ায় সাগরে পর্যাপ্ত পানি নামতে পাগছে না। আছে উত্তরাঞ্চলের বানের পানি আর জোয়ারের পানির চাপও। সামনে পূর্ণিমার জোয়ার। পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে আবারো পানিতে প্লাবিত হলে সর্বনাশ হবে কৃষকের।
উপজেলার মূলভূখন্ড বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউপির চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাস মোল্লা বলেন, ‘বেড়িবাঁধ না থাকায় চন্দ্রদ্বীপের মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। কেবল কৃষি, মৎস্যই নয়; যোগাযোগ, সেনিটেশন-হাইজিনসহ সকল সেক্টরে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে চরবাসীর। পানিতে বিলীন হয়েছে পুরো চন্দ্রদ্বীপের কয়েশ’ কৃষকের শাক-সবজির খামার।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর লক্ষ্য মাত্রায় ১৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর স্থানীয় জাতের এবং ১৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল জাতের আমনের বীজতলার মধ্যে নি¤œাঞ্চলে আনুমানিক ৫ হেক্টর বিনস্ট ও ১০ হেক্টর আংশিক বিনস্ট হতে পারে। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় সর্বসাকুল্যে সামন্য ১ পার্সেন্ট বীজতলার ক্ষতি হবে। তবে ৫কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁপে চাষিদের।’