জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের পাঁচ বছরের ভিসা দেবে ভারত

১৫ জুলািই ২০১৮ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে ‘Revised Travel Arrangement-2018' চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়

ছবি : পিআইডি

ভারত

আসাদুজ্জামান-রাজনাথ বৈঠক

জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের পাঁচ বছরের ভিসা দেবে ভারত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই, ২০১৮

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরের শেষদিনে গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। বৈঠকে দুই দেশ ‘সংশোধিত ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট ২০১৮’ চুক্তি সই করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এবং ভারতের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল সেক্রেটারি বিরাজ রাজ শর্মা এ চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তির পর উভয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের যেকোনো বিপদ-সঙ্কটে ভারত সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরজীবী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

রাজনাথ সিং সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আমরা সীমান্ত সমস্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবে এখনই সব বলতে চাচ্ছি না। বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার খবর জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কোনো সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি না। দু’দেশের আন্তরিক চেষ্টায় এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আলোচনায় ভিসা সহজীকরণের বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিদেশে যান এক কোটির বেশি লোক। এর মধ্যে ৩০ লাখ লোক বিভিন্ন কারণে ভারতে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও ভিসা সহজীকরণ করার কথা বলা হয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ৬৫ বা এর বেশি বয়সী কেউ আবেদন করলে তাকে পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের একই ধরনের ভিসা দেওয়া হবে।

ফেক কারেন্সি নিয়ে দুই দেশ বিব্রত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের উদ্যোগগুলো জানিয়েছি। সেই জায়গা থেকে তারা আশঙ্কামুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে অনেক সমস্যার সমাধান করেছি। ভবিষ্যতেও আলোচনার মাধ্যমে করব। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যখনই সহায়তা চেয়েছি, তখনই তারা করেছে। তাদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। সে অনুযায়ী বন্দি বিনিময় হচ্ছে।

মিয়ানমার প্রসঙ্গে ভারত আন্তর্জাতিক সহযোগিতার হাত বাড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনেও সহযোগিতা করবে দেশটি। ইয়াবার কারখানাগুলো আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে। ভারতে যেসব জায়গায় ফেনসিডিল তৈরি হতো সেসব কারখানা বিএসএফ বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় টহলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এখানেও ভারত সাহায্য করবে। এরমধ্যে দু-একটি অরক্ষিত এলাকা রয়েছে। সেখানে দুটি বিওপি করব, যাতে করে মানব পাচার, চোরাচালান, মাদক সমস্যাসহ অন্যান্য বিষয় রোধ করা সহজ হবে। বৈঠকে ভারত একাধিকবার সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করেছে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশে থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। আমরা ভারতকে জানিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশের এক ইঞ্চি‌ জমিও সন্ত্রাসীদের দেওয়া হবে না।

বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি ভারতে আত্মগোপন করে আছে তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা ভারতকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে তারা।

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে নয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। আর বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

গতকাল সকাল ১০টা ২২ মিনিটে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে পৌঁছালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়। এর আগে রাজনাথ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং জাদুঘরের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন রাজনাথ সিং। এরপর তিনি সেখানে রাখা পরিদর্শন বইয়ে সই করেন। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে সেখানে তিনি প্রার্থনায় অংশ নেন রাজনাথ। সেখান থেকে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়ে বৈঠকে অংশ নেন।

১৩ জুলাই (শুক্রবার) সন্ধ্যায় তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছান রাজনাথ সিং।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads