জীবনের প্রয়োজনে জৈব কৃষি

জীবনের প্রয়োজনে জৈব কৃষি

সংগৃহীত ছবি

কৃষি অর্থনীতি

জীবনের প্রয়োজনে জৈব কৃষি

  • শহীদুল হক বাদল
  • প্রকাশিত ২৩ মে, ২০১৮

বিশ্বে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম একটি হলো জৈব কৃষি। কেননা পৃথিবীর বুকে নিরাপদ জীবনযাপন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য জৈব কৃষি ব্যবস্থার জনপ্রিয়করণ জরুরি। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের কাছে আশির দশকের আগ পর্যন্ত অর্গানিক কৃষি জনপ্রিয় ছিল। তারপর নানা প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে কৃষকরা বাধ্য হয়ে রাসায়নিক কৃষিতে ঝুঁকে পড়ে নব্বইয়ের দশকে। এতে দৃশ্যমান ফসল উৎপাদন বাড়লেও মাটির উর্বরা শক্তি, স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নানা চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষায়। জানা গেছে, কীটনাশক বা বিষের অবাধ আমদানি, কৃষকের মধ্যে সচেতনতার অভাব, অর্গানিক সনদদাতা কর্তৃপক্ষের অভাব এবং বাজারজাতে সমস্যা দেশে অর্গানিক চাষের পথে বড় বাধা। অথচ সত্তরের দশকের আগে দেশের কৃষি ব্যবস্থা অর্গানিক পদ্ধতির ওপরই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু ওই সময়ের পর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রাসায়নিক সারের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল শস্যের চাষাবাদ শুরু হয়। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় অর্গানিক পদ্ধতি। বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে অর্গানিক কৃষিতে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। বাংলাদেশেও জৈব চাষাবাদে ফিরে আসছে কৃষকসমাজ তবে এর মাত্রা খুবই কম। আমাদের কৃষকদের সচেতন করে তুলতে পারলে জৈবসার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজির উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিভিন্ন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জৈবসার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন খরচ রাসায়নিক সারের চেয়ে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশ কম হয়। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার সবজি ও ধান গাছে প্রয়োজনীয় ইউরিয়া, পটাশ ও ফসফেট সারের জোগান দেয়। আধা-কম্পোস্ট গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, ধানের কুঁড়া, মাছ-মুরগির পাখনা ও পরিপাকতন্ত্র তথা পরিত্যক্ত অংশ একসঙ্গে করে জৈব কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়। জৈবসার প্রয়োগ করলে আর অতিরিক্ত ইউরিয়া, পটাশ ও টিএসপি সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না বলে মাটির উর্বরতা ও স্বাস্থ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ। জৈব সার দিয়ে চাষ করলে প্রথম এক থেকে দু’বছর ফলন কিছুটা কম হবে তবে চার থেকে পাঁচ বছর পর রাসায়নিক সার দিয়ে চাষ করা জমির তুলনায় ফলন বেশি হবে। দেশে অর্গানিক কৃষির যথাযথ সম্প্রসারণ নিশ্চিত করতে হলে একটি নিয়ন্ত্রক বা তদারকি প্রতিষ্ঠান দরকার। তা না হলে উৎপাদনে কৃষককে ধরে রাখা যাবে না। পাশাপাশি অর্গানিক পণ্য বিষয়ে ভোক্তা আস্থা বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বালাই নিয়ন্ত্রণে তুঁতে-চুনের মিশ্রণ

বকুল হাসান খান  

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কপার যৌগ ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহূত হয়। এগুলোর মধ্যে কপার সালফেট (তুঁতে) ও চুনের (হাইড্রেটেড লাইম) মিশ্রণ যা বোর্দো মিশ্রণ হিসেবে পরিচিত তা বহুল ব্যবহূত। এটি জৈব খামার বা জৈব বাগানের কাজে ব্যবহার করা যায় তবে লক্ষ রাখতে হয়, ঘন ঘন বা বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করলে মাটিতে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে কপার জমা হচ্ছে কিনা। যদি হয় তাহলে তা মাটির স্বাভাবিক কাজে বা মাটির উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রথমে প্লাস্টিকের বালতি বা গামলায় ১০ চা চামচ চুন নিয়ে তাতে ধীরে ধীরে ২ লিটার পানি যোগ করতে হয়। এরপর আরো ২ লিটার পানি যোগ করতে হয় বা আগেও একসঙ্গে ৪ লিটার পানি নেওয়া যায়। চুন যোগ করার কিছুক্ষণ পর সাড়ে তিন চা চামচ পরিমাণ তুঁতে-চুনের পানির মিশ্রণে যোগ করে নাড়নকাঠি দিয়ে ভালোভাবে ধীরে ধীরে নাড়তে হয় সম্পূর্ণ গলে না যাওয়া পর্যন্ত। মিশ্রণ যেন কোনোভাবেই শরীরের সংস্পর্শে না আসে বা না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবধান থাকতে হয়। মিশ্রটি ছেঁকে নিলে স্প্রের জন্য তৈরি হয়ে যায়। 

শুষ্ক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সকালবেলায় এটি স্প্রে করতে হয়। এ সময় স্প্রে করলে গাছ ধীরে ধীরে শুকায়; কিন্তু মিশ্রণটি পাতার ভেতর ঢুকতে পারে না। স্প্রে করার আগে এবং স্প্রে করার সময় মিশ্রণটি বার বার নাড়তে হয় এজন্য যে, এটি যেন জমাট বেঁধে না যায়।  

এই তুঁতে-চুন মিশ্রণ দিয়ে যেসব রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— টমেটো ও আলুর ফ্লি বিটল, ফল ও সবজির পাতার এনথ্রাকনোজ, সবজির ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত পাতা ঝলসানো রোগ, পাতার কালো দাগ, ডাউনি মিলডিউ, পাউডারি মিলডিউ বা সাদা গুঁড়া রোগ, পাতার মরিচা রোগ, সোলানেসি পরিবারের (বেগুন, টমেটো, আলু) মড়ক বা ব্লাইট রোগ এবং বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা সংক্রমিত পাতার রোগ। তুঁতে-চুন মিশ্রণ স্প্রে করার পর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। গাছে কোনোরূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিনা তা দেখার জন্য। সেজন্য প্রথমে আক্রান্ত অল্পসংখ্যক গাছে স্প্রে করতে হয়। ফলাফল ভালো হলে পুরো ক্ষেতে প্রয়োগ করতে হয়। স্প্রে অবশ্যই সকালের দিকে করা ভালো।  

খাবার তৈরির কাজে ব্যবহূত হয় এমন কোনো পাত্র এই মিশ্রণ তৈরির কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়। মিশ্রণ তৈরি ও ব্যবহার শেষে পাত্রটি সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। শিশু ও গৃহপালিত পশুপাখি থেকে মিশ্রণটিকে দূরে রাখতে হয়। প্রয়োগের আগে ক্ষেতের বা গাছের সংগ্রহযোগ্য সব ফসল তুলতে হয়। স্প্রের সময় সাবধান থাকতে হয়, যেন গায়ে না লাগে। স্প্রের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হয়।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads