দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে শিক্ষক-সাংবাদিক আন্দোলনকারী সহ আহত হয়েছে অন্তত প্রায় ২৫ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের উপস্থিতিতেই আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড.ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সারারাত অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার দুপুরে তারা এ হামলার শিকার হন।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের এলোপাথারি মারধর শুরু করেন। হামলা চালাকালে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমকে নিরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, উভয়পক্ষে শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীরা রয়েছে আমরা কাকে ফিরাবো। তাদের মধ্যেকার ভুলবোঝাবুঝি তাদের নিজেদের মধ্যেই সমাধান হোক।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো জুয়েল রানা বলেন, আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
তবে আন্দোলনে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সমন্বায় অধ্যাপক রাইয়ান রাইন বলেন, আন্দোলনে কোন শিবির সংশ্লিষ্টতা নেই, আন্দোলন দমাতে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
ভিসিপন্থি শিক্ষকদের উষ্কানিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
হামলায় আহত হয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক ড.মির্জা তাসনিমা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক আনোয়ারুলউল্লাহ ভূইয়া , অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, সহযোগি অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহামুদ ও বিবি হাফছা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীররনগরের সমন্বায়ক ও মুখপাত্র অধ্যাপক রাইয়ান রাইন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হোন দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাইদুল ইসলাম, বার্তা ২৪ এর প্রতিনিধি রুদ্রু আজাদ, যমুনা প্রতিদিনের ইমরান হোসেন হিমু।
হামলায় উপাচার্য অপসারণ আন্দোলনের অন্যতম সমন্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো আশিকুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ এবং আন্দোলনকারী মারিয়াম ছন্দা মারুফ মোজ্জামেল, সাউদা সহ আরো ১০/১২ জন গুরুতর আহত হয়েছে।
ছাত্রলীগের হামলার পরপর ভিসিপন্থি শিক্ষকদের প্রটোকলে বাসভবন থেকে কার্যলয়ের উদ্দেশ্যে বের হোন উপাচার্য অধ্যাপক ড.ফারজানা ইসলাম।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষক ড.খবির উদ্দিন বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন নাক্যরজ্জনক ঘটনা ঘটেনি। উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের উপস্থিতি ও উষ্কানিতে এ হামলা হয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ছাত্রলীগ যখন হামলা চালিয়েছে তখন ভিসিপন্থি শিক্ষকরা হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।
অধ্যাপক রাইয়ান রাইন বলেন, আমরা যখন এখানে আন্দোলন করছিলাম, ছাত্রলীগ তার বিশাল বাহিনী নিয়ে হামলা করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বল প্রয়োগ করে আমাদের দমানো যাবেনা। আমি শুনছি যে আন্দোলন বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। কিন্তু তাতে আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ভিসিকে অপসারণ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ -উল হাসান বলেন, আমরা থামনোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিস্থতি প্রতিকূলে থাকায় কিছুই করতে পারি নি।