রেজাউল করিম সোহাগ
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রাকৃতিক ভাবে আবারো উট পাখির বাচ্চা ফুটেছে। সাফারি পার্কে এর আগেও একবার উট পাখির বাচ্ছার জন্ম হয়েছিল। বেশ কিছু সময় বিরতি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উটপাখির বাচ্চার জন্ম হলো পার্কের উট পাখির নেট ঘেরা বেষ্টনীতে। ইমু পাখির খাঁচার পাশেই উট পাখির নেট ঘেরা খাঁচা রয়েছে।
গতকাল রোববার ভোরে এ ছানাটি উটপাখির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মী নিখিল চন্দ্রের নজরে আসে। পরে তিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানকে জানালে তিনি দ্রুত এসে মা উট পাখি ও ছানার আলাদা যত্নের নির্দেশ দেন।
এ নিয়ে পার্কে আলাদা আনন্দ বিরাজ করছে। দর্শনার্থীদের বিরক্ত থেকে রেহাই দিতে ছানার নিরাপত্তার কথা ভেবে পর্দা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ছানাকে। এখনো দর্শনাথীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি উট পাখির ছানািট। ছানাটি এখনো মায়ের পাখনার নিচেই বেশে সময় লুকিয়ে থাকে। সময় সময় উকি দেয় ছানািট। এক পা দু পা হেটেই মায়ের পাখনার নিচে লুকিয়ে পড়ে উট পাখির ছানাটি। শীতের তিব্রতা থাকায় মা বাবা পালা করে ছানাকে উষনতা দিতে লুকিয়ে রাখে পাখনার নিচে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- ইমু পাখির বেষ্টনীর পাশেই উটপাখির বেষ্টনীতে ৬ টি উটপাখি রয়েছে। এরি মধ্যে উটপাখির বেষ্টনীর ভিতরে ছড়ানো ছিটানো বেশ কিছু ডিম পড়ে রয়েছে। এ সবগুলেই নষ্ট ডিম। তবে আরো কিছু ডিমে পালা করে তা দিচ্ছে নারী ও পুরুষ উটপাখি। কালো রঙের পরুষ পাখি আবার ধূসর পালকের মা উট পাখি একটি নিদিষ্ট স্থানে ডিমে তা দেয়। ডিম নিয়ে বসে থাকা মা বাবার পাশে সময় সময় করে উঁকি দিয়ে ছানাটি আবার পালকের নিচে আশ্রয় নেয়। অনেক সময় গা ঘেঁষে হাটাহাটিও করে ছানাটি। ফুঁটফুঁটে ছানাটি সময় বুঝে শাকপাতায় ঠুকুর দেয়।
উটপাখির দেখভালের দায়িত্বে থাকা নিখিল চন্দ্র জানান, রোববার খুব সকালে বেষ্টনীর কাছে এসে দেখি একটি ডিম নিয়ে মা পাখি বেশি বেশি নাড়াচারা করছে। প্রতিদিনের মতো কজে এসেই নজর দেই ডিমে তা দেওয়া উটপাখির দিকে। কিছুক্ষন পরেই একটি বাচ্চা চোখে পড়ে। পরে দ্রুত এসিএফ স্যারকে জানায়। খবর পেয়ে তিনিও দ্রুত আসেন উপটাখির খাঁচার কাছে। পরে তিনিও বাচ্চা দেখেন। নির্দেশ দেন আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার বাচ্চার বিষয়ে। এখন নিয়ম করে একজন সারাক্ষন উটপাখির বেষ্টনীর কাছেই ডিউটি করি।
পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট মুস্তাফিজুর রহমান জানান, দ্বিতীয়বার পার্কে উটপাখির বাচ্চার জন্ম হলো। এ নিয়ে পার্কে ব্যতিক্রমি আনন্দ বিরাজ করছে। আরো কিছু ভাল ডিমে তা দিচ্ছে উটপাখিরা।
ওয়াইল্ড লাইফ অ্যানিমেল কিপার নুরুনবী মিন্টু বলেন উটপাখির বেষ্টনীর কাছে দর্শনার্থীদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বিরক্ত আর নিরাপত্তার কথা ভেবে একটি পর্দা দিয়ে আড়াল করা হয়েছে উটপাখি ও ছানাকে। সময় মতো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হবে।
ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার আনিসুর রহমান বলেন উটপাখি নিয়মিত ডিম দিলেও সেগুলো থেকে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে পার্কে ইনকিউভেটর মেশিনের মাধ্যমে ডিম ফোঁটানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়েছে। তিনি বলেন, উটপাখি ঘাস, লতা-পাতা ও কীট-পতঙ্গ খায়। তবে সাফারি পার্কে এদেরকে শাক ,ঘাস,দানাদার খাবার দেওয়া হয়। বিশাল লম্বা গলার পাখিগুলো অল্প উচ্চতার গাছের পাতা খেতে পারে। উটপাখি প্রাকৃতিক পরিবেশে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বাঁচে। তবে ক্যাপটিভে (আবদ্ধ) পরিবেশে ৫০ বছরের বেশি বাঁচে। ঘন্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পাড়ে উটপাখি।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান জানান শনিবার ডিম ফুটে বাচ্চাটি বের হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে রোববার খুব ভোরেই চোখে পড়ে উটাপাখির ছানাটি। আরো বেশ কিছু ডিমে পালা করে নারী ও পুরুষ পাখি তা দিচ্ছে। পাখিদের আচরনে বুঝা যাচ্ছে এগুলো থেকে আরো বাচ্চা পাওয়া যেতে পারে। উটপাখি সাধারনত ভাল ডিমেই তা দেয়। নষ্ট ডিম নিজেই দুরে ফেলে রাখে। তিনি বলেন উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা পাওয়া খুব কঠিন। পার্কে উপযুক্ত পরিবেশে পার্কে একাধিকবার উটপাখি বাচ্ছা দিল। এ সাফল্য সকলের একান্ত প্রচেষ্ঠায়। এ সফলতা ধরে রাখতে আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।