সুপার শপে কেনাকাটায় ব্যস্ত অভিনেত্রী শম্পা

ছবি সংরক্ষিত

ফিচার

জনপ্রিয় হচ্ছে সুপার শপে কেনাকাটা

  • পরাগ মাঝি
  • প্রকাশিত ১ জুলাই, ২০১৮

২০০১-০২ সালের দিকে রাজধানী ঢাকায় যখন প্রথমবারের মতো সুপার শপ চালু হয়, সে সময় এতে কেনাকাটার চেয়েও সজ্জিত শপটি ঘুরে ঘুরে দেখতেই মানুষের আগ্রহ ছিল বেশি। তাকে তাকে সাজানো গৃহস্থালির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ধীরে ধীরে মানুষকে আকৃষ্ট করতে থাকে। এভাবেই মাত্র দেড় দশকের মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে একটি পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে বাহারি পণ্যের এই সুপার শপ ধারণাটি।

নাগরিক জীবনে নিত্যদিনের বাজার ঝামেলার সহজ সমাধান এখন এই সুপার শপগুলো। সাধারণ সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে নিত্যদিনকার তরিতরকারি, মাছ, মাংস সবই পাওয়া যায় সুপার শপে। পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি ভোজ্য অনেক পণ্যের পাশাপাশি কসমেটিকস, তৈজসপত্রসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রয়োজনীয় পণ্য। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচ্ছন্ন ও সুবিন্যস্তভাবে এই পণ্যগুলো শপের তাকে তাকে সাজানো থাকে। বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে সুপার শপের যাত্রা শুরু হলেও উন্নত বিশ্বে এর শুরু হয়েছিল অনেক বছর আগে। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ‘এস্টোর মার্কেট’ নামে একটি সুপারশপ খোলেন ভিনসেন্ট এস্টোর নামে এক ব্যবসায়ী। তবে মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী সুপার মার্কেটের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে শিল্পোন্নত ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিভিন্ন দোকান থেকে ঘুরে ঘুরে যাচাই করে কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকের কাছেই এটা অনেক সময়সাপেক্ষ এবং বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, যে পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী তাদের জন্য বাজারে ঘুরে ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা বেশ কষ্টকর।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত সুপার শপগুলোর মধ্যে মিনা বাজার, স্বপ্ন, আগোরা, আলমাস, প্রিন্স বাজার, মোস্তফা মার্ট ইত্যাদি অন্যতম। রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বেশি বেশি সুপার শপ দেখা যায়। এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে জনপ্রিয় শহরগুলোতেও এই শপগুলোর শাখা বা চেইন দেখা যায়। বিশেষ করে সিলেট এবং চট্টগ্রামে এই হারটি সবচেয়ে বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে সুপার শপ ‘স্বপ্ন’-এর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আউটলেট রয়েছে। পিছিয়ে নেই আগোরা, মিনা বাজার, আলমাস, মোস্তফা মার্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই নিত্যনতুন সেবা দিয়ে গ্রাহকের অভ্যস্ততা বাড়াচ্ছে। আর এই অভ্যস্ততাকে পুঁজি করেই শপগুলো বিভিন্ন শহরে তাদের শাখা বা চেইন তৈরি করছে।

সমীক্ষায় এও দেখা গেছে, সুপার শপের যাত্রা বাংলাদেশে ২০০১ সালে শুরু হলেও এখনো খুচরা বাজারের নেতৃত্বে আসতে পারেনি এই খাত। বর্তমানে খুচরা বাজারের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ সুপার শপগুলোতে লেনদেন হচ্ছে। ধীরে ধীরে এই খাতে মানুষের আগ্রহ এবং অভ্যস্ততা বাড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দেশে ২০-২৫টি সুপার শপ রয়েছে। সারা দেশে এসব সুপারশপের অন্তত ২৫০ শাখায় ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করছে।

আসলে একই ছাদের নিচে মানুষের প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্য, বিশেষ করে গ্রোসারি পণ্য পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই সুপার শপের যাত্রা শুরু। উন্নত দেশগুলোতে গত প্রায় পঞ্চাশ বছর থেকে সুপার মার্কেটগুলো সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অল্প কয়েক বছর আগে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এ ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বিশ বছরে দেশের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষের জন্য কেনাকাটার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিসর হবে সুপার শপগুলো। তাকে তাকে সাজানো বাহারি পণ্য, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মানসম্মত পণ্যের নিশ্চয়তাই শুধু নয়, আধুনিক সুপার শপগুলো অনলাইন সেবা থেকে শুরু করে হোম ডেলিভারির মতো আরো অনেক সেবা দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে প্রতিনিয়ত। এই আকর্ষণকে কাটিয়ে আধুনিক সময়ের ক্রমান্বয়ে ব্যস্ততায় আর কত দিন ঘুরে ঘুরে বাজার করার সময় পাবেন ক্রেতারা?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads