প্রায় ১৫ বছর আগে অস্কার মুনোজ নামের একজন শখের সংগ্রাহক আন্দিজ পর্বতের পশ্চিমে অবস্থিত চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমিতে বেড়াতে আসেন। বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে ঘুরতে তিনি চলে যান এর লা নোরিয়া নামক স্থানে। বহু আগে এখানে মানুষের বসবাস থাকলেও এখন সে জায়গা পুরোপুরি পরিত্যক্ত। তিনি সেখানেই চামড়ার থলেতে মোড়ানো এক টুকরো সাদা কাপড় পড়ে থাকতে দেখেন। কাপড়টা অনাবৃত করলে একটি ক্ষুদ্র মানবসদৃশ প্রাণীর কঙ্কাল দেখতে পান। প্রাথমিকভাবে কঙ্কাল মনে হলেও পরে এর চামড়ার আস্তরণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে তিনি বুঝলেন এটি আসলে একটি মমি। দৈর্ঘ্যে ৬ ইঞ্চি লম্বা মমিটির মাথা ছিল সাধারণ মানুষের মাথার তুলনায় অনেকাংশে লম্বা এবং চোখা। অক্ষিকোটর দুটোও ছিল অস্বাভাবিক রকমের বড় এবং প্রায় ত্রিকোণাকার। ছিল লিকলিকে লম্বা দুটো হাত ও পা। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, সাধারণ মানুষের বক্ষপিঞ্জরে হাড় থাকে ১২ জোড়া, কিন্তু এর বুকে হাড়ের সংখ্যা ছিল ১০ জোড়া।
সেই ঘটনার প্রায় এক দশক পরে ২০১৩ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী গ্যারি নোলান মমিটিকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। প্রাপ্তিস্থান অ্যাটাকামার সঙ্গে মিল রেখে তিনি মমিটির নামকরণ করেন অ্যাটা। তিনি প্রমাণ করলেন, অ্যাটা কোনো মানবসৃষ্ট ধোঁকা নয়, সে এককালে জীবিত থাকা পরিপূর্ণ একটি প্রাণের নমুনা।
কিন্তু একটি প্রশ্নের জবাব মিলছিল না, অ্যাটা কি এককালে মানুষ ছিল? নাকি অন্য কিছু? অ্যাটার এক্সরে, ক্রোমাটোগ্রাফি ও জেনেটিক স্যাম্পলিং করে একে মানুষ বলেই ঘোষণা করলেন নোলান। কিন্তু গবেষণার একটি ফল নোলানের এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। অ্যাটার ডিএনএর ৯১ শতাংশ মানুষের জিনোমের সঙ্গে মিললেও বাকি ৯ শতাংশ মেলে না। নোলানের মতে, এই ব্যতিক্রম শুধু ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের অংশটুকুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, পুরো জিনোমের ক্ষেত্রে নয়।
২০১৮ সালে অ্যাটাকে নিয়ে নতুন করে গবেষণা শুরু হয়। এর নেতৃত্ব দেন গ্যারি নোলান এবং তার সহকর্মী অতুল বাট। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে অত্যন্ত সূক্ষ্ম জেনেটিক অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে তারা অ্যাটার ভেতর লুকিয়ে থাকা অজানা তথ্য বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষণায় তারা জানতে পারেন, ভ্রূণ অবস্থাতেই অ্যাটার মৃতু্যু হয়। ক্রোমোসোম বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় অ্যাটা ছিল একজন নারী এবং সে আসলে তৎকালীন অ্যাটাকামা অঞ্চলেরই স্থানীয় কোনো বাসিন্দার সন্তান।
মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৬ সপ্তাহের মতো। সাধারণত মৃত্যুর পর যত দিন যায়, ডিএনএ সূত্রগুলো খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে ছোট হতে থাকে। সেই তুলনায় অ্যাটার ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্ট যথেষ্ট লম্বা। এ থেকে ধারণা করা হয় অ্যাটার এই মমির বয়স ৫০০ বছরের বেশি নয়।
গবেষকদের মতে, ভ্রূণ অবস্থায় অ্যাটার শরীরে প্রায় ৫৪ রকমের মিউটেশন ঘটে। এরই বহিঃপ্রকাশ অ্যাটার এই অস্বাভাবিক অবয়ব।