মোবাইল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা, অপারেটর কর্তৃক স্থাপিত টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সঙ্কট এবং এই টাওয়ার স্থাপনের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমাতে টাওয়ার কোম্পানির নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সেই মোতাবেক সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচিত চার কোম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে বিটিআরসি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিটিআরসির কনফারেন্স হলে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ওই চার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হাতে লাইসেন্স তুলে দেন। এ সময় ইডটকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহুল চৌধুরী, সামিট টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ প্রাইভেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান করিম ও এবি হাইটেক কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান মোল্লা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বুঝে নেন।
এ সময় মোস্তাফা জব্বার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে অনেক মাইলফলকের মধ্যে আরেকটি মাইলফলক অর্জন হলো। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলব আমাদের এই কাজের উদ্দেশ্য আমাদের মনে রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এই টাওয়ার খাতে টেলিকম কোম্পানিগুলো এখন বিনিয়োগের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে। তাই আমি মনে করি এখান থেকে বেঁচে যাওয়া বিনিয়োগগুলোই অপারেটররা তাদের কোয়ালিটি অব সার্ভিসের পেছনে খরচ করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি, আপাতত আমাদের হাতে নতুন কোনো আইনগত বিষয় অবশিষ্ট নেই। তাই এখন পুরনো বিষয়গুলোকে আবার নতুন করে হালনাগাদ করার কথা ভাবছি। যেগুলোর মধ্যে আইএলডিটিএস পলিসি, টেলিকম অ্যাক্টগুলোর আপডেট করা দরকার বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বাংলাদেশে এই টাওয়ারকে কেন্দ্র করে শুধু দেশের রাজস্বই সেভ হচ্ছে না বরং বেকারত্বের হারও কমেছে। প্রচুর জনগণের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আমি আশা করছি এই টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী আরো উন্নত টেলোযোগাযোগ সেবা প্রদানে সমর্থ হবে।
অনুষ্ঠানে গাইডলাইন অনুযায়ী সেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে বলা হয়েছে, লাইসেন্স পাওয়ার পর প্রথম বছর কোম্পানিটিকে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর জেলা শহর, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ উপজেলা, চতুর্থ বছর ৬০ শতাংশ উপজেলা ও পঞ্চম বছর দেশের সব উপজেলায় টাওয়ার নিতে হবে।
জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা রাখা হয়েছে ৭০ শতাংশ। এ ছাড়া আবেদনকারীদের জয়েন্ট ভেঞ্চারের কোনো একটি কোম্পানির ন্যূনতম পাঁচ হাজার সাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চার প্রতিষ্ঠানকেই এককালীন ফি হিসেবে ২৫ কোটি ও বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৫ কোটি এবং ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে ২০ কোটি রাখতে হবে। এ ছাড়া লাইসেন্স পাওয়া কোম্পানিকে আয়ের সাড়ে ৫ শতাংশ বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি করতে হবে। অন্যদিকে ১ শতাংশ দিতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিতে গাইডলাইন জারি ও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিআরসি। এরপর লাইসেন্স পেতে আটটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে গত ৫ আগস্ট কমিশনের এক সভায় যোগ্যতাক্রমে চার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়। আট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯১ নম্বর পেয়ে যোগ্যতাক্রমে প্রথম হয় ইডটকো বাংলাদেশ। ৮৮ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে টিএএসসি সামিট টাওয়ার, ৮৫ নম্বর পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আইএসওএন টাওয়ার বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড, এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড ৮২ নম্বর পেয়ে ৪র্থ হয়েছে।
এ ছাড়া ৮০ নম্বর পেয়ে যমুনা টাওয়ার লিমিটেড পঞ্চম, ৭৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ এফটিএ বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ৬৯ নম্বর পেয়ে বিডি টাওয়ার বিজনেস কো-লিমিটেড সপ্তম হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি অংশীদার না পাওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউকেশন কোম্পানি লিমিটেড-বিটিসিএল কোনো নম্বরই পায়নি।
প্রসঙ্গত, টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স হস্তান্তর করার ফলে এখন থেকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো কোনো নতুন টাওয়ার স্থাপন করতে পারবে না। একই সঙ্গে লাইসেন্স পাওয়া টাওয়ার কোম্পানির কাছে তাদের টাওয়ার বিক্রি করতে পারবে। তবে নিজেরা আর টাওয়ার ভাড়া দিতে পারবে না।