ঘরের আগুনই বড় চ্যালেঞ্জ আরিফের

বদরুজ্জামান সেলিম সাধারণ সম্পাদক সিলেট মহানগর বিএনপি

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

সিলেট সিটি নির্বাচন

ঘরের আগুনই বড় চ্যালেঞ্জ আরিফের

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না সেলিম

  • আবু তাহের চৌধুরী, সিলেট
  • প্রকাশিত ৯ জুলাই, ২০১৮

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ঘরে বাইরে চরম চাপের মধ্যে রয়েছেন। শুরুতে দলের মনোয়ন পেতে চাপে পড়েন। সে যাত্রায় পার পেলেও তার মনোনয়ন নিয়ে দল ও জোটের মধ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রার্থী মনোনয়নের বিরোধিতা করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা। এর সঙ্গে যোগ হয় ২০ দলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর বিদ্রোহ। জামায়াতের সিলেট মহানগর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ভোটের মাঠ থেকে না সরার ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এখনো তিনি নিজের অবস্থানে অটল আছেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আছেন সুবিধাজনক অবস্থান। দলের সবাই তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে একযোগে নির্বাচনে নেমে পড়েছেন।

এদিকে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাগরিক কমিটির ব্যানারে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম বলেছেন, ১৯৭৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া জাগদলের সদস্য হিসেবে রাজনীতি শুরু করেছি। পরে ছাত্রদলের জেলা সভাপতিসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছি, এখনো করে যাচ্ছি। দীর্ঘ প্রায় ৪ দশক ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে দলের নির্দেশ মেনে এসে এসেছি, কোনো দিন ব্যত্যয় করিনি। এবার না হয় আমি দলের নির্দেশ অমান্য করলাম; কোনোভাবেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছেন। নগরবাসী আমার সঙ্গে রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা আরিফুল হক চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করে দলের নেতাকর্মীর প্রত্যাশানুযায়ী আমাকে সমর্থন দেবেন। দল যদি সমর্থন নাও দেয় তবু আমি সিলেটবাসীর খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রাখব। নগরবাসী ও দলের তৃণমূল কাকে চায় ৩০ জুলাই সেটির ফায়সালা হবে।’

নগরীর দরগাগেটের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স রুমে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল রোববার দুপুরে এসব কথা বলেন বদরুজ্জামান সেলিম।

লিখিত বক্তব্যে সেলিম বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দল আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল এবং দলীয় হাইকমান্ডের নির্বাচনী সাক্ষাৎকারে দলের ৬ মনোনয়ন প্রত্যাশী আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী না করার ব্যাপারে জোরালো দাবি জানান। তারা তখন আমাকে সমর্থন জানান। ৯ মাস পূর্বেও দলের সভাপতি ও ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাদের সম্মতিতে আরিফুল হক চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী না করার ব্যাপারে স্মারকলিপি দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সকল সদস্য ও দলের মহাসচিবের কাছে। তারপরও আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এটি অন্যায় করা হয়েছে।’

২০ দলীয় জোট ও বিএনপির কর্মিসভা নিয়ে সেলিম বলেন, ‘২০ দলীয় জোটও আরিফুল হক চৌধুরীকে মেনে নেয়নি। অন্য শরিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। জামায়াতে ইসলামী আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে সভার আয়োজন করলে সেটিতে মাত্র ৪৭ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। অথচ ২৭টি ওয়ার্ড ও মহানগর কমিটি মিলে অন্তত ৫০০ নেতা শুধু কমিটিতেই আছেন। এতে প্রমাণ হয় মহানগর কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরা আমার সমর্থনে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। দলের অন্যতম নেতা সামসুজ্জামানও সম্প্রতি আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রত্যাখান করেছেন।

বিগত দিনে সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রীদের সম্পদের ব্যাপারে বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, অতীতের দুই মেয়রের স্ত্রীরা এত সম্পদের মালিক বনে গেলেন কোন জাদুর মন্ত্রে নগরবাসীর উচিত এটি চিন্তা করা। সাবেক দুই মেয়র ও তাদের গিন্নীরা সম্পদের হিসাব হলফনামায় তুলে ধরে নগরবাসীকে পরিহাস করছেন বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে নাগরিক কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হলেও বদরুজ্জামান সেলিম লিখিত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে তৃণমূলের ভোটে আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। আমি এখনো দলের কর্মী। আমার বুকে দলের ব্যাজ পরা রয়েছে। আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

অপরদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ আরিফুল হক চৌধুরী অবশ্য নানাভাবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমের মান ভাঙানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সিলেট মহানগর বিএনপির কর্মিসভায় তিনি সেলিমের প্রশংসার ঝুঁড়ি উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ওই কর্মিসভায় আরিফ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে সেলিম তার প্র্রাশে এসে দাঁড়াবেন।

দলের প্রতি সেলিমের অবদান ও কর্মতৎপরতার ব্যাপক প্রশংসা করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, তিনি সব সময় দলের সুখ দুঃখে পাশে ছিলেন। তিনি খুবই কর্মঠ নেতা। বর্তমানে আবেগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আমি আশা করি নির্বাচনে তিনি আমার প্র্রাশে এসে দাঁড়াবেন।’

কিন্তু এমন প্রশংসায় সেলিমের মন গলছে না। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল। নির্বাচনে তিনি লড়ছেনই। আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্যের ব্যাপারে বদরুজ্জামান সেলিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তার জবাবে বলেন, আপাতত আপনাদের শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, আমি আমার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ডিটারমাইন্ড’। ওই সময় বলেছিলেন বাকিটা বলব ৮ তারিখের সংবাদ সম্মেলনে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads