বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্যানসার, লিভার ও কিডনিজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে এবং আরো ৩ লক্ষাধিক লোক এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই গরিব মানুষ। অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না। পরিবারের কারো এ ধরনের একটি রোগ হওয়া মানে পুরো পরিবারটি শেষ হয়ে যাওয়া। আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধারদেনা থেকে শুরু করে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। গরিব রোগীদের সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এসব অসহায় ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরিব রোগীদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের জন্য এ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ক. ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরিব রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান।
খ. আক্রান্ত রোগীর পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সহায়তা করা।
গ. সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা।
কর্মসূচি বাস্তবায়নের কৌশল : ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরিব রোগীদের শনাক্ত করে সমাজসেবা অধিদফতরের জনবল, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
কার্যএলাকা : ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত গরিব রোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে কার্যএলাকা বলতে সমগ্র বাংলাদেশকে বোঝাবে।
অনুদানের পরিমাণ : ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত নির্বাচিত প্রত্যেক গরিব রোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি/হ্রাসের ক্ষমতা সরকার সংরক্ষণ করবে।
প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড : ক. নাগরিকত্ব : প্রার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
খ. দুস্থ : সর্বোচ্চ দুস্থ ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
গ. আর্থসামাজিক অবস্থা :
১. আর্থিক অবস্থার ক্ষেত্রে : শিশু, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনকে ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
২. সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে : বয়োজ্যেষ্ঠ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের ক্রমানুসারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ঘ. ভূমির মালিকানা : প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমিহীন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক্ষেত্রে বসতবাড়ি ছাড়া কোনো ব্যক্তির জমির পরিমাণ ০.৫০ একর বা তার কম হলে তিনি ভূমিহীন বলে গণ্য হবেন।
আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্তির যোগ্যতা ও শর্তাবলি
১. ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত হতে হবে;
২. সংশ্লিষ্ট রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে। যেমন- ক্যানসারের ক্ষেত্রে বায়োপসি বা অন্যান্য টেস্ট রিপোর্ট থাকতে হবে এবং কিডনি রোগের ক্ষেত্রে অপঁঃব জবহধষ ঋধরষঁৎব অথবা ঈযৎড়হরপ জবহধষ ঋধরষঁৎব-এ আক্রান্ত ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছে এমন রোগীদের বিবেচনা করতে হবে।
৩. জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত ফটোকপি) থাকতে হবে।
৪. বাছাই কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হতে হবে।
প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া
১. উপপরিচালকরা ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত রোগীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রাপ্ত আবেদনের আলোকে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে জেলা কমিটিতে পেশ করবেন।
২. সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক তার জেলাধীন আবেদনকারী ক্যানসার, কিডনি ও লিভার সিরোসিস রোগীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যোগ্য ও অযোগ্য ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য সংবলিত দুটি পৃথক তালিকা ও রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন।
৩. উক্ত তালিকা এবং প্রাপ্ত আবেদনগুলো জেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে হবে এবং বাস্তবায়ন কমিটি আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির যোগ্য একটি তালিকা (আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ) প্রাথমিকভাবে অনুমোদন করে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদফতরের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বরাবর প্রেরণ করবেন। ওই কমিটি সারাদেশের তালিকা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক প্রার্থীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি বরাবর প্রেরণ করবেন। কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সম্মতি বা অনুমোদনক্রমে চেক বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।