বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর রাজধানীর বনানীর বাসায় গত সোমবার গভীর রাতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হানা দেয় বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার দাবি, এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজও তাদের কাছে আছে। তবে ডিবি বলছে, তাদের কেউ সেখানে যায়নি। এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল মঙ্গলবার ইলিয়াসপত্নী লুনা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাদের বনানীর বাসা ‘সিলেট হাউজ’ ঘিরে ফেলে দারোয়ানকে ফটকের তালা খুলতে বলে। দারোয়ান রাজি না হওয়ায় তারা ফটকে লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিও চালায়। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করেন। এর মাঝে কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোন করে সাহায্যের আকুতি জানান। বেশ কিছুক্ষণ পর গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা চলে যায়।
তবে ইলিয়াস আলীর বাসায় হানা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিবির ডিসি মশিউর রহমান। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর বাসায় ডিবির কোনো ইস্যু নেই। ডিবির কোনো সদস্য সেখানে যাননি। তা ছাড়া ইলিয়াস আলীর বাসায় সিসি ক্যামেরা আছে। আশপাশের সড়কেও সিসি ক্যামেরা আছে। প্রয়োজনে তারা সিসি ক্যামেরা চেক করে দেখতে পারেন, কারা সেখানে গিয়েছিলেন।
সিসি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য লুনা বলেন, গুলশান থানা পুলিশ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল। এখন তা নেই। তারা সেই সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে গেছে। তবে পাশেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসার সিসি ক্যামেরায় ডিবি সদস্যদের ফুটেজ পাওয়া গেছে। প্রশাসন চাইলে ফুটেজ খতিয়ে দেখতে পারে।
গতকাল সকালে লুনা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বনানীর বাড়িটিতে গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনটি গাড়িতে করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক অবস্থান নেয়। এ সময় দারোয়ানকে বাড়ির গেট খুলে দিতে বলেন তারা। দারোয়ান রাজি না হওয়ায় দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মহাখালী থেকে নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। তার গাড়ি বাসার কাছেই খালি অবস্থায় পাওয়া যায়। ইলিয়াস বিএনপির গত কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সিলেট জেলা কমিটির সভাপতিও ছিলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিবাদ : গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পবিত্র রমজান মাসেও পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ তল্লাশির নামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করে চলেছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার কিংবা জেলগেটে গ্রেফতার চলছেই। তিনি বলেন, সোমবার রাতে সাহরির কিছুক্ষণ আগে ইলিয়াস আলীর বাসায় ডিবি পরিচয়ে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। তারা জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ইলিয়াস আলীর অসুস্থ স্ত্রীকে দরজা খুলতে বলে। আতঙ্কিত হয়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাকেসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ফোনে আকুতি জানাতে থাকেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরির জন্যই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন রিজভী।