‘হারানো গণতন্ত্র’ পুনরুদ্ধারে চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ছয় মাস ধরে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার কারাগারে তার সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং দেশবাসীকে সজাগ থেকে গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে গতকাল বিকাল ৪টায় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন মির্জা ফখরুল। এ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দুপুরের দিকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারের মাধ্যমে তার সাক্ষাতের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শক্রমে একাই সাক্ষাতের জন্য কারাগারে যান ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর প্রথম সাক্ষাতে অসুস্থ দলের চেয়ারপারসনকে দেখে আবেগপ্রবণ অবস্থায় সালাম ও কুশল বিনিময় করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ম্যাডামকে এভাবে দেখব চিন্তাই করতে পারিনি। এটা আমার জন্য বেদনার। ঈদের দিন বাসার খাবারের প্রতীক্ষায় তিনি দীর্ঘ সময় কোনো খাবার খাননি। পরে আইজি প্রিজনের অনুরোধে সন্ধ্যায় খাবার খেয়েছেন।’
বিএনপির মহাসচিব জানান, খালেদা জিয়া শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ আছেন। তবে তার মনোবল শক্ত আছে। তার কাছে মনে হয়েছে, খালেদা জিয়া ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছেন। সাক্ষাৎকালে তিনি বিএনপির সর্বশেষ অবস্থা খালেদা জিয়াকে অবহিত করেছেন। দ্রুতই তার জামিন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মির্জা ফখরুল।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার শারীরিক অবস্থা আগে যেমন দেখেছেন, তেমনই আছে। তার চেয়ে ভালো নেই। সাক্ষাতে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়সহ সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কয়েকটি মামলায় জামিনে রয়েছেন। আরো দুটি মামলা রয়েছে। আশা করি, এগুলোতেও দ্রুতই তার জামিন হয়ে যাবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ওই কারাগারে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাতের জন্য গত ১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১৩ জনের তালিকা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদের দিন তাদের সাক্ষাৎ মেলেনি।