খুলল পক্ষাঘাত চিকিৎসার নতুন দ্বার

স্পাইনাল কর্ড আর মস্তিষ্ক মিলে মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (সিএনএস) গঠিত হয়

ছবি : ইন্টারনেট

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

খুলল পক্ষাঘাত চিকিৎসার নতুন দ্বার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২২ জুলাই, ২০১৮

স্পাইনাল কর্ডের মূল উপাদান স্নায়ুকোষ মস্তিষ্ক থেকে কোনো নির্দেশ শরীরের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছে দেয়। স্পাইনাল কর্ড আর মস্তিষ্ক মিলে মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (সিএনএস) গঠিত হয়। স্পাইনাল কর্ডের কোনো সমস্যা হলে মাসকুলার ডিসট্রোপি নামক রোগ হয়। এ ধরনের অসুখে আক্রান্ত হলে মানুষের মেরুদণ্ড, মাংসপেশি ও কঙ্কাল দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটে এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও তৈরি হয়। আর এ কারণে পেশি বল হারিয়ে অসাড় হয়ে পড়লে সেই অবস্থাকে বলে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত। কিছু শারীরিক কসরত আর এক ধরনের কৃত্রিম পেশি কোষ স্থাপনা ছাড়া এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই বললেই চলে।

তবে বোস্টন শিশু হাসপাতালের একদল গবেষক সম্প্রতি এই রোগের চিকিৎসার নতুন একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। আঘাত পেলে স্পাইনাল কর্ড অঞ্চলভেদে কাজ করা বন্ধ করে দেয় কেন তার কারণ জানতে পেরেছেন তারা। একই সঙ্গে তারা দেখেছেন আক্রান্তের শরীরে বিশেষ উপায়ে অতিক্ষুদ্র আণবিক যৌগকে বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে স্থাপন করলে পক্ষাঘাত ভালোও করা যায়।

বোস্টন শিশু হাসপাতালের এফএম কিরবাই নিউরোবায়োলজি সেন্টারের পিএইচডি গবেষক ঝিগাং হে’র নেতৃত্বে গবেষকরা কয়েকটি ইঁদুরের ওপর চালান এই গবেষণা। গবেষণা নিবন্ধটি ১৯ জুলাই ‘সেল’ নামক চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

আসলে দীর্ঘদিন ধরেই স্পাইনাল কর্ডের আঘাত ও এর থেকে সেরে ওঠার উপায় নিয়ে বিভিন্ন প্রাণীর ওপর নানা গবেষণা হয়ে আসছে। সব গবেষণায়ই সাধারণত স্নায়ুকোষের স্নায়ুতন্তু বা অ্যাক্সনের কার্যকারিতার ওপর ফোকাস রাখা হয়েছে। তবে অ্যাক্সনের রিজেনারেশন বা পুনর্জন্ম করতে পেরেছেন কেবল বোস্টন শিশু হাসপাতালের গবেষকরাই। নতুন এই গবেষণাটির বিষয়ে হে বলেন, মারাত্মক ধরনের স্পাইনাল কর্ড আঘাতের পরে দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে ওঠার আশ্চর্য উপায় পেয়েছি আমরা। সিএলপি২৯০ নামের এক ধরনের আণবিক যৌগের মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত পেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া যেসব ইঁদুরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ইঁদুরই আবার হাঁটতে পেরেছে।

তিনি জানান, এই উপায়ে স্পাইনাল কডের নিচের অঙ্গে স্বল্পশক্তির বিদ্যুৎ চালনা করা হয়। একই সঙ্গে তাদের কিছু শারীরিক কসরতও করানো হয়। এভাবে ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ পরেই দেখা যায় আগে যেসব ইঁদুর নড়তেই পারত না সেগুলো গুটি গুটি পায়ে হাঁটতেও পারছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎপ্রবাহের ঘটনাটিকে বলে ‘এপিডিওরাল উদ্দীপনা’। এ ধরনের উদ্দীপনার আসলে স্নায়ু উত্তেজনার মতো করেই প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে গবেষকরা খেয়াল করে দেখেন, এপিডিওরাল উদ্দীপনা যখন বন্ধ করা হয়েছে তার প্রভাবও কেটে গেছে। এটি তাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। তবে হে আশা প্রকাশ করেন, উপায় যেহেতু জানা গেছে তখন ব্যবস্থা একদিন হবেই। কারণ সিএলপি২৯০-এর মাধ্যমে বা জেনেটিক্যালি যদি প্রাণীর পেশিতে কেসিসি২ নামের প্রোটিনটি পুনঃস্থাপন করা যায় তবে ইনহিবিটরি স্নায়ু মস্তিষ্ক থেকে সঙ্কেত পাবে। এই সঙ্কেতের ফলে পুরো স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হবে। তবে অতিরিক্ত উদ্দীপনা বা অতিরিক্ত প্রতিবন্ধকতা কোনোটিই ভালো ফল আনবে না। এজন্য ভারসাম্য দরকার।

হে জানান, তারা শিগগির ক্লিনিক্যালি এ ধরনের চিকিৎসা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করবেন। তখন আরো ভালোভাবে এই গবেষণার একটা প্রায়োগিক ফল মিলবে।

চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও গবেষণা প্রকল্পের অর্থসহায়তায় পরিচালিত গবেষণাটিতে হে’র সঙ্গে ছিলেন বোস্টন শিশু হাসপাতালের বো চেন, ওয়াই লি এবং চীনের ন্যানটং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিন ওয়াই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads