যে কোনো সমাজ ও যে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাধি হলো রক্তারক্তি ও জুলুম-অত্যাচার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, জুলুম-অত্যাচারের কারণে বিশ্বের অনেক বড় বড় সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, সমাজ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে, সমাজের লোক চরম ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে। মজলুমের আহাজারিতে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সেখানকার আকাশ-বাতাস। পরিশেষে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে জালিমের ওপর এমন সব বিপদ ও শাস্তি নেমে এসেছে, যার কথা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। আর ওই শাস্তিগুলো ছিল ভূমিকম্প, বজ্রপাত, দুর্ভিক্ষ, কঠিন কঠিন রোগব্যাধি এবং ভয়ানক আরো অনেক কিছু।
ক্ষমতার নেশা এতই ভয়ানক যে, এর কারণে অনেক সময় মানুষ দয়া-মায়া, করুণা এমনকি মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে। সর্বত্র জুলুম-অত্যাচারের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের বাদশাহ আর্য মেহের সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, তিনি শৌখিন শিকারি ছিলেন। তীর নিক্ষেপের প্রতি তার আসক্তি ছিল। একসময় তার প্রাসাদের বাইরে তারই কোনো একজন কর্মচারীর শিশুপুত্রকে ক্রীড়ারত দেখতে পান। তখন তার মনে একজন মানুষকে তীরের নিশানায় পরিণত করার শখ জাগে।
তিনি সেই ক্রীড়ারত শিশুটিকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে সবার সামনে প্রাণ ত্যাগ করে। পাছে সম্রাট নারাজ হন, তাই শিশুটির পিতা নিজের পুত্রের জন্য ক্রন্দন না করে বাদশার নির্ভুল তীরন্দাজের প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানান।
ক্ষমতার দাপটের নেশায় মত্ত হয়ে যুগে যুগে এ ধরনের আরো অনেক ঘটনাই যে ঘটেছে মানব-ইতিহাস তার সাক্ষী। আর এর পরিণামে প্রত্যেক জালিমকে তার কৃতকর্মের ফলও ভোগ করতে হয়েছে একদিন। আজ বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে মুখোশের আড়ালে আধুনিক শাসকরা ভদ্রতা ও মনুষ্যত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিরীহ মানুষের ওপর যখন যেভাবে ইচ্ছা ঝাঁপিয়ে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, মিয়ানমারসহ আরো অনেক দেশের কথাই বলা যাবে। সাধারণ জনগণকে অবাধে হত্যা করছে, দেশছাড়া করছে, দলিত-মথিত করছে। বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেরকমই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দলগুলোর মধ্যে আমরা লক্ষ করলাম। আমরা চাই না বাংলাদেশের বর্তমান শান্তি ও উন্নতি বিনষ্ট হোক। আগামীকাল জনগণের ভোট। তাদের অধিকার রক্ষায় তাদের সুযোগ দেওয়া হবে- এটাই কামনা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জয়যুক্ত হবে বাংলাদেশ ও তার মানুষ।
লেখক : শিক্ষক, রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া, ঢাকা
ahmadabdullah7860¦gmail.com