নির্বাচনী ইশতেহার ও তারুণ্য-ভাবনা

ইশতেহার

মুক্তমত

নির্বাচনী ইশতেহার ও তারুণ্য-ভাবনা

  • ইমানুল সোহান
  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আড়াই কোটি তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তাই এবারের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব অনেক বেশি। তার প্রমাণ মিলেছে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণদের আকৃষ্ট করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহারে ভিন্নতা রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি ইশতেহার তরুণদের আশার আলো দেখাচ্ছে। তার মধ্যে পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। এই ইশতেহারটি তরুণদের মনে ধরেছে।

এবারের নির্বাচন নিয়ে তরুণদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তরুণরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। এবারই হয়তো প্রথম তরুণরা নির্বাচনে অনেকখানি গুরুত্ব রাখছে। তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রত্যাশা রাখে। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শো ও পত্রিকায় তারুণ্যের ভাবনার মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের নিজ ব্যানারে নিয়ে আসার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ইশতেহারে বলেছে— তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তরুণ যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। বিএনপি তাদের ইশতেহারে বলেছে— আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর ঐক্যফ্রন্ট তাদের ইশতেহারে বলেছে— সরকারি চাকরিতে শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া কোনো কোটা থাকবে না। ইশতেহারে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিয়েই ইশতেহার প্রদান করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও নির্দিষ্টতা দেওয়া হয়নি। তবে তারা তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের কথা বলেছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশের তরুণদের বড় একটি অংশ নিষ্ক্রিয়। তারা কোনো ধরনের শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত নন, প্রশিক্ষণও নেই। দেশে এমন তরুণদের হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। মেয়েদের মধ্যে এই হার অনেক বেশি (সূত্র : নভেম্বর ১৮, প্রথম আলো)।

তাই তরুণ ভোটাররা কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তাকারী দলের পক্ষেই হয়তো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তরুণরা সেই সরকারই প্রত্যাশা করে, যে সরকার তারুণ্যবান্ধব হবে। যে সরকার তরুণদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে পাশে থাকবে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর দিনের পরিক্রমায় প্রতিশ্রুতিগুলো তারা ভুলতে শুরু করে। তরুণরা সহিংস রাজনীতি পছন্দ করে না। অথচ ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নীতি-আদর্শ ভুলে গিয়ে সহিংসতার পথ বেছে নেয়। যার ফলে দেশের রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। তবে এবারের নির্বাচন দিয়েই হয়তো নির্বাচনে তরুণদের দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে।

তবে এবারের নির্বাচনে তরুণদের অগ্রাধিকার সব থেকে বেশি। নির্বাচনী ইশতেহার থেকে মনোনয়ন সবক্ষেত্রে বিষয়টি প্রমাণিত। তরুণরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মেধার মূল্যায়ন চায়। আর এ কারণেই তরুণরা দুর্নীতিমুক্ত দেশ প্রত্যাশা করে। দেশের পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে তরুণদের আগ্রহের কমতি থাকলেও এবারের নির্বাচনে তরুণরা অনেক বেশি আগ্রহী। এর কারণ হলো কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। এই দুই আন্দোলনে তরুণরা তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। অনেক হামলার পরেও তারা অহিংস থেকে আন্দোলন চালিয়ে গেছে, যা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর শেখার আছে। তরুণরা এই দুই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের সচেতন মহলের নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছে।

এই বিষয়টিকে পুঁজি করে এখন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এটাই তরুণদের সাফল্য। তাই তরুণরাও ভাবতে শুরু করেছে, তাদের হাত ধরেই দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সুতরাং এবারের নির্বাচনে তরুণরা যে দলকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে, সেই দলের গলায় জয়মাল্য উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণরা জিতলে, জিতবে দেশ— গড়ে উঠবে সোনার বাংলাদেশ।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads