ছবি: সংগৃহীত

শ্রমশক্তি

চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

ক্রমবর্ধমান চাহিদা সামাল দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ : চেয়ারম্যান

  • শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

দেশের অর্থনীতি ও সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট’ কার্যকরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল এই বন্দরের। কন্টেইনার পোর্ট হিসেবে এ বন্দর আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতি বছর। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ বলেছেন, কার্গো, কন্টেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি সামাল দেওয়া এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্ট্র্যাটেজিক মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে অত্যাধুনিক ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহসহ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারো বন্দর ভবন ও বন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সকালে বন্দর ভবনে জাতীয় পতাকা ও বন্দরের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘পোর্ট ডে’র কর্মসূচি শুরু হবে। এ সময় বন্দরে অবস্থানরত সব জাহাজ থেকে একনাগাড়ে বাজানো হবে হুইসেল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এবারো বরাবরের মতো থাকছে অবসর নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংবর্ধনা ও ঐতিহ্যবাহী মেজবানির আয়োজন।

বন্দরের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য ‘চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বন্দরের কার্যক্রমের পরিধি বাড়ায় ১৯৭৬ সালে বন্দর ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ ১৯৭৬ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বন্দর পরিচালিত হয়ে আসছে।

১৯৭৭ সালে কন্টেইনার যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম বন্দর। এসএস টেনাসিটি নামের জাহাজে পরিবাহিত ৬টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে কন্টেইনার পোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৭ সালে বন্দরে শুরু হয় বার্থ অপারেটিং সিস্টেম। দেশের আমদানি-রফতানির ৯২ শতাংশ পরিচালিত হয় এ বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর বাড়ছে রফতানির পরিমাণ। বাড়ছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত আট বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। ২০০৯ সালে এ বন্দর দিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৯ টিইইউস। আর ২০১৭ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ টিইইউস। বন্দর কর্মকর্তাদের হিসাবে আগামী ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ৩২ লাখ টিইইউস ছাড়িয়ে যাবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল, কর্ণফুলী কন্টেইনার টার্মিনালসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। একই সঙ্গে অপারেশনাল কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কার্যক্রম। তিনি জানান, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে সরকারের দিকনির্দেশনায় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯টি রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন, ৪টি স্ট্যাডল ক্যারিয়ার, ৫টি কন্টেইনার মুভার, ১টি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন বন্দরের অপারেশনাল কাজে সংযুক্ত করেছি। আরো তিনটি স্ট্যাডল ক্যারিয়ার শিগগির চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছবে। আরো ৩টি স্ট্যাডল ক্যারিয়ার সংগ্রহের জন্য শিগগির চুক্তি সম্পাদন হবে। ৬টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন, ২টি আরটিজি, ১টি মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। ৪টি শিপ টু শোর গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহের দরপত্র মূল্যায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৬টি আরটিজির এলসি খোলা প্রক্রিয়াধীন ও ৩টি আরটিজির দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads