‘নিজেদের কপাল, নিজেরাই খেয়েছে’!
মো. আবদুল হালিম, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
টাঙ্গাইলের মধুপুর সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুরে আনারসের ফলন ভালো হলেও বাজারে নেই চাহিদা। সন্তোষপুর গ্রামের ফলচাষি আইয়ুব আলী জানান, ‘আনারস চাষিরা নিজেদের কপাল নিজেরাই খেয়েছে। কেমিক্যাল ছাড়া আনারস আবাদ করতে পারলে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারলে আনারস আবাদ আবারো লাভজনক হবে।’ জানা গেছে, অতিলোভ আর অধিক মুনাফার আশায় চাষি ও অসাধু ব্যবসায়ীরা মেশিনের মাধ্যমে জমিতেই স্প্রে করছেন বিষাক্ত কেমিক্যাল ইথোপেন। ফলে বিষাক্ত কেমিক্যালের ভয়ে বাজার থেকে আগের মতো ভোক্তারা আনারস ক্রয় করছেন না। এ কারণেই আনারসের বাজারে ধস নেমেছে। গত বছর কৃষক জমিতে আনারসপ্রতি দাম পেয়েছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এ বছর একই ধরনের আনারসের দাম উঠছে ১২-২০ টাকা। সরেজমিন সন্তোষপুর, রাঙ্গামাটিয়া ও হাতিলেইট গিয়ে দেখা যায়, আনারস বাগানে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে রাইফেন নামক কেমিক্যাল প্রয়োগ করছেন চাষিরা। কথা বলে জানা যায়, আনারস রসালো হওয়ার পর বিক্রয়ের ২-৩ দিন আগে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর বিষাক্ত ইথিয়ন গ্রুপের রাইফেন, পটাশ সার, লবণ একত্র করে ১৫ থেকে ১৬ লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে সরাসরি ৮-৯শ আনারসে প্রয়োগ করেন। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের বেশি মুনাফার লোভকেই দায়ী করেন রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন। ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হারুন আল মাকসুদ বলেন, সরাসরি এ ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে কিডনি, ক্যানসার, লিভারের মারাত্মক ক্ষতিসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. নাসরিন আক্তার বানুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৫ হেক্টর বেশি জমিতে ১ কোটি ২৪ লাখ ২শ’ টন আনারস উৎপাদন হয়েছে। আনারসের বাজার ধসের কারণ হলো অধিক ফলন এবং অতিমাত্রায় কেমিক্যালের ব্যবহার।
চৌগাছায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন
শহিদ জয়, যশোর
চলতি মৌসুমে কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে যশোরের চৌগাছায়। অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর কাঁঠালের বাজার দর ভালো থাকায় কৃষক বেশ খুশি। চৌগাছার উৎপাদিত কাঁঠাল ঢাকা, খুলনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, বাগেরহাটসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামই কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। একসময় এ জনপদের মানুষ পতিত জমি কিংবা বাড়ির আশপাশে শুধু নিজেদের প্রয়োজনে কাঁঠাল গাছ লাগাত। কিন্তু এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। সরেজমিন চৌগাছার প্রধান কাঁঠাল হাটে আড়পাড়া গ্রামের কাঁঠাল বিক্রেতা জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ছোট সাইজের ১শ’ কাঁঠাল ২ থেকে ৩ হাজার আর বড় সাইজের ১শ’ কাঁঠাল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা কাঙ্ক্ষিত দাম থেকে বরাবরই বঞ্চিত বলে অনেকে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আড়পাড়া, মাড়ুয়া, দক্ষিণসাগর, জগদীশপুর, মির্জাপুর, পাতিবিলা, মুক্তদাহ, নিয়ামতপুর, নারায়ণপুর, আন্দারকোটা, চাঁদপাড়া. কংশারীপুর, বড়খানপুর, মাধবপুর, বেড়গোবিন্দপুর, দেবীপুরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকভাবে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। ভোলা জেলার সদর উপজেলা থেকে আসা বেপারি সাদেক হোসেন, দৌলতখাঁ থেকে আসা বেপারি বজলুর রহমান, খুলনার আবদুল মালেক, ঝালকাঠির হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য বাজারের তুলনায় চৌগাছায় ব্যবসা করে সবাই বেশ লাভবান হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচউদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। কাঁঠাল চাষ আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
হরিণাকুণ্ডু কৃষি বিভাগের ছাদবাগান
দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
ছাদকৃষির সম্প্রসারণ, পতিত ছাদে স্বাস্থ্যসম্মত সবজি, ফল, ফুল ও ঔষধি গাছ উৎপাদন করে পরিবারের প্রতিদিনের চাহিদা মেটানো, বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, সর্বোপরি ছাদকৃষি সম্পর্কে কৃষকদের বাস্তবসম্মত ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে নিজের অফিসের ছাদে বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরশেদ আলী চৌধুরী। বাংলাদেশের খবরের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনি শংকর বিশ্বাসসহ সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি পুরনো ও অব্যবহূত প্লাস্টিক এবং লোহার ড্রাম, বালতি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করেছেন ট্রে। সেগুলো টব হিসেবে সেট করেছেন ছাদে। সেখানে পুঁইশাক, পালংশাক, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, মরিচ, মিষ্টি কামরাঙা, পেয়ারা, ড্রাগন, আপেল কুল, বারোমাসি আম, গোলাপ, গাদাসহ ফুল এবং ঔষধি গাছের চাষাবাদ করছেন।
তিনি জানান, হরিণাকুণ্ডুর শিশুকলি হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মচারীসহ বেশ কয়েক ব্যক্তি তাদের ছাদবাগান দেখে নিজেরা বাগান তৈরি করেছেন। জেলা প্রশাসক ২০ জন উৎসাহী কৃষককে ছাদবাগানের জন্য বীজ ও চারা বিতরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ছাদবাগান একদিকে যেমন পরিবারের সবজি ও ফলমূলের চাহিদা এবং পুষ্টিপূরণ করবে, অন্যদিকে পরিবেশ সুরক্ষা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও ভূমিকা রাখবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঝিনাইদহ উপপরিচালক জিএম আবদুর রউফ জানান, তিনি কৃষি বিভাগের ছাদবাগান পরিদর্শন করেছেন। এই উদ্যোগটি দৃষ্টান্ত হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ুক-এমনটাই প্রত্যাশা।