কৃষিপ্রযুক্তির মডেল ধনতোলা গ্রাম

কৃষিপ্রযুক্তির মডেল ধনতোলা গ্রাম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

কৃষি অর্থনীতি

কৃষিপ্রযুক্তির মডেল ধনতোলা গ্রাম

  • আশরাফুজ্জামান বাবু, বদরগঞ্জ (রংপুর)
  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর, ২০১৮

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ধনতোলা। এ গ্রামের অধিকাংশই হতদরিদ্র দিনমজুর। একমাত্র আয়ের পথ কৃষি। কৃষিকাজে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বদলে দিয়েছে ধনতোলা গ্রামের চিত্র। ফসলের রোগবালাই, পোকামাকড় দমন করতে সহজ পথ খুঁজে পেয়েছে গ্রামের মানুষ। কৃষকরা কীটনাশক ছাড়াই শিখেছেন চাষাবাদ করতে। এমনকি কৃষিকাজের ব্যবহারের জন্য কিষান-কিষানিরা ল্যাপটপ, কম্পিউটার ব্যবহার করে তথ্য আদান-প্রদান করছেন। ব্যবহার জানেন আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটা-মাড়াই করতে। শুধু তা-ই নয়, এখন কৃষিশ্রমিক ছাড়াই ধান রোপণ ও শস্য বপন করেন নতুন প্রযুক্তির যন্ত্র দিয়ে। গ্রামে প্রতিমাসে প্রায় দুই টন কেঁচো বা ভার্মিস্ট সার উৎপাদন করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের ধনতোলা গ্রাম এখন কৃষিপ্রযুক্তির মডেল। সরেজমিন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবহেলিত কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিতে এবং কৃষিতে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে গ্রামের সাধারণ কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন উচ্চশিক্ষিত দুই যুবক মো. অহেদুল হক ও মো. আবদুল হান্নান। তারা চাষিদের ভাগ্য পরিবর্তনে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি)’র কর্মীরা মাঠে গিয়ে হাতেকলমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

ধনতোলা আইসিএম ক্লাব গড়ে ওঠা প্রসঙ্গে জানা গেছে, ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে অহেদুল হক (৩৮) ও নুরুল ইসলামের ছেলে আবদুল হান্নান (৩৬) ২০০৯ সালে গ্রামের ২৫ কৃষক ও ২৫ মহিলাকে নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সঞ্চয় সমিতি। গড়ে তুলেছেন সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা-আইসিএম ক্লাব। এখন তারা মাঠে বসে ফসলের রোগবালাইসহ নানা সমস্যার সমাধান পান। কৃষিতে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, সমন্বিতভাবে ফসল উৎপাদনসহ নানা কাজে ধনতোলা আইসিএম ক্লাবের সদস্যরা চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ধান রোপণ, কাটা-মাড়াই, প্যাকেটজাত করাসহ তারা স্বল্পমূল্যে ভাড়া দিচ্ছেন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। রংপুরের বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জসহ আশপাশ উপজেলার অন্তত ১০ হাজার কৃষক এখন তাদের অনুসরণ করছে। ইতোমধ্যে সফলতার জন্য তারা সরকারি সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন প্রায় ২০ লাখ টাকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। এরই মধ্যে ঢাকার খামারবাড়ির কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলাম ও রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীব তাদের সাফল্য দেখে অভিভূত হয়েছেন। তাদের ওই ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকারি অনুদান হিসেবে ধনতোলা আইসিএম ক্লাবকে দেওয়া হয়েছে মিনি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, পাওয়ার থেসার,  সিডার,  রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, জেনারেটর, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, মডেম, লেমিনেটিং মেশিন, স্পাইরাল মেশিন, সাউন্ড সিসটেমসহ আসবাবপত্র। এসব আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে এখন পরিচিত সাধারণ কৃষকরাও। কিষান-কিষানিরা কৃষিকাজে সময় ও অর্থ সাশ্রয় করতে পারছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান বলেন, ধনতোলা আইসিএম ক্লাব উপজেলায় একমাত্র সংগঠন, যেখান থেকে কৃষকদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এখনো যখন সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারেই চাষাবাদ করছে, তখন ধনতোলা আইসিএম ক্লাব কৃষি বিভাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নতুন কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহারে তারা বদলে ফেলেছেন স্থানীয় চাষীদের ভাগ্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads