কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করলেও খাতটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। বাড়তি পানির প্রবাহ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাংলাদেশের কৃষি খাতে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতিবছর কৃষি খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৩ দশমিক ১০ শতাংশ ক্ষতি হয়। কৃষি খাতের এ ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার জলবায়ুভিত্তিক কৃষি (সিএসএ) প্রোফাইল ও জলবায়ুভিত্তিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা (সিএসআইপি) প্রণয়ন করেছে। এতে সহায়তা দিয়েছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ উপলক্ষে আয়োজিত দুই দিনের কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিএসএ ও সিএসআইপি উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কিমিও ফ্যান ও সংস্থার অ্যাগ্রিকালচার গ্লোবাল প্র্যাকটিসের পরিচালক মার্টিন ভ্যান নিউকোপ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মৎস্য অধিদফতরের আওতায় সামুদ্রিক মৎস্য খাতের একটি প্রকল্পে ২৪ কোটি ডলার সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রাণিসম্পদ খাতের অপর একটি প্রকল্পে সংস্থাটি দেবে আরো ৫০ কোটি ডলার। দুই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা দাঁড়াবে ৭৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ দেশের সর্বস্তরে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এ খাতে বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগকে স্বাগত জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সিএসআইপির প্রতিনিধি গুডফ্রয় গ্রসজেন ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি টোবিয়াস বেডকার দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ভূমিকা রাখছে কৃষি খাত। তবে স্বল্পমেয়াদি আবহাওয়া ঝুঁকি ও দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু ঝুঁকি এ খাতের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর কৃষি খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৩ দশমিক ১০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে চাষযোগ্য জমি কমে আসবে বলেও ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকিসূচক অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে জলবায়ুর পরিবর্তনের মধ্যেও এ খাতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।