প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৫০০-তে। রাজ্যের প্রধান মর্গের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা লিসা লিপোয়েন্ট গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত রাজ্যের বৃহত্তম শহর ভ্যানকুভার, লিটনসহ বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত মরা গেছেন ৪৮৬ জন।
হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত বিভিন্ন কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে লিসা লিপোয়েন্ট বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাপমাত্রা হ্রাস না পেলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ বিশ্বের শীতলতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম কানাডায় সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহেই গ্রীষ্মকাল শেষ হতে থাকে, আগমনের প্রস্তুতি নিতে থাকে শীত। শীতকালে দেশটিতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। প্রতি বছর এই চিত্র দেখেই অভ্যস্ত কানাডার জনগণ। এর আগে জুন মাসে কানাডায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কিন্তু চলতি বছরের আবহাওয়া বিগত বছরের সব চিত্র উল্টেপাল্টে দিয়েছে। ২৬ জুন থেকে দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়াসহ দেশটির ১০ টি রাজ্যেই শুরু হয়েছে ব্যাপক তাপপ্রবাহ। গত চার দিন ধরে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা দেখা গেছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটন শহরে। টানা চারদিন এই শহরটির তাপমাত্রা ৪৯ এবং ৪৯.৫ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। এছাড়া, কানাডার অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৬ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া দপ্তর ‘এনভায়র্নমেন্ট কানাডা’। ‘এনভায়র্নমেন্ট কানাডা’-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ইতোমধ্যে দেশের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অ্যালবার্টা, সাসকাচুয়ান, নর্থওয়েস্টার্ন টেরিটোরিস এবং ইউকন রাজ্যের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রাজনিত সতর্কতা জারি করেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বৃহত্তম শহর ভ্যানকুভারের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে মাঝারি ও কমদামি হোটেলসমূহে আশ্রয় নিতে ছুটছেন এবং এর কারণ একটাই-শীতপ্রধান দেশ কানাডার অনেক বাড়িতে শীতাতপ যন্ত্র (এসি) নেই।
শহরের ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য রাখা সব এসি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। পুরনো এসিও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার অনেক এলাকায় এখন একটি পুরনো এসি সর্বনিম্ন দুই হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
এনভায়র্নমেন্ট কানাডা-এর সিনিয়র জলবায়ুবিদ ডেভিড ফিলিপস বলছেন, ‘আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শীতপ্রবণ দেশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বরফ পড়ে, এমন একটি দেশ। এখানে মাঝেমধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বা তুষার ঝড় হয়ে থাকে, কিন্তু এরকম উষ্ণ তাপমাত্রা এখানে প্রায় কখনোই দেখা যায় না। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, তাতে দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ের তাপমাত্রাও কানাডার কয়েকটি এলাকার বর্তমান তাপমাত্রার চেয়ে কম।’
যুক্তরাষ্ট্রেও মৃত্যুর মিছিল : যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলজুড়ে বয়ে যাওয়া নজিরবিহীন তাপপ্রবাহে অসংখ্য মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা এখন সামনের কয়েকদিনের তীব্র গরম ও দাবানলের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অরেগনে গরমের তীব্রতা গত বুধবার থেকে কমে এলেও এরই মধ্যে রাজ্যটিতে তাপপ্রবাহজনিত কারণে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পোর্টল্যান্ড যে কাউন্টির অন্তর্ভুক্ত, সেই মাল্টনোমা গত শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে হাইপারথারমিয়াকে (হাইপোথারমিয়ার বিপরীত দশা) দায়ী করেছেন কাউন্টিটির ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।
তাকে উদ্ধৃত করে দেওয়া সরকারি এক বিবৃতিতে পরিস্থিতির তুলনা করতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অরেগনে হাইপারথারমিয়ায় মাত্র ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলেও জানানো হয়।
গত কয়েকদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটির হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীর চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছে অরেগনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।