বাংলাদেশের সুপরিচিত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন একটি পুষ্টিকর শাক কলমিশাক। এটি পুকুর, ডোবা, হাওর ও খালবিলে ভাসমান অবস্থায় আপনা আপনি জন্মে। এই শাকে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় কলমিশাকে ১.৮ গ্রাম গ্রাম প্রোটিন, ৯.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ০.১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেভিন), ৪২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১০৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিলিগ্রাম লৌহ, ১০৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন ও ৪৬ কিলো ক্যালোরি খাদ্যশক্তি থাকে।
হেলেঞ্চা, থানকুনি, কচুশাক (কালো) ও পুঁইশাকের চেয়ে কলমিশাকে ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)-এর পরিমাণ বেশি রয়েছে। ভিটামিন বি-১ (থায়মিন), স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বাভাবিক রাখে এবং দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধনে সাহায্য করে। ভিটামিন বি-১’র মারাত্মক অভাব হলে বেরিবেরি নামক রোগ হয়। তাছাড়া ডাঁটাশাক ও সবুজ রঙের কচু শাকের তুলনায় দেশীয় কলমিশাকে অধিক পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে। এই ক্যারোটিন থেকে আমাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’ সৃষ্টি হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখা ভিটামিন ‘এ’র প্রধান কাজ। দেহে ভিটামিন ‘এ’র অভাব হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রাতের বেলায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় রাতকানা রোগ। ভিটামিন ‘এ’র অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে চোখে অন্যান্য কঠিন রোগ দেখা দেয় এবং আস্তে আস্তে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। অল্প বয়সের শিশুরাই (দশ বছর বয়স পর্যন্ত) এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। শিশু ও ছোট ছেলে-মেয়েদের অন্ধত্ব ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধে দেশীয় কলমি খুবই উপকারী শাক। গর্ভবতী মহিলাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’র অভাব হলে গর্ভের শিশু দুর্বল ও ক্ষীণ স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে। তাই শিশু ও কিশোর-কিশোরীসহ গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যারোটিন (ভিটামিন ‘এ’) সমৃদ্ধ দেশীয় কলমিশাক এবং গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের অন্যান্য শাকসবজি থাকা আবশ্যক।
ডাঁটাশাক, থানকুনি ও হেলেঞ্চা শাকের চেয়ে দেশীয় কলমিশাকে বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গর্ভবতী মহিলারা যদি ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগেন, তাহলে এর প্রভাব শিশুদের ওপর দেখা দেয়। যেমন- ক্যালসিয়ামের অভাবে শিশুদের হাড়ের কাঠামো দুর্বল, ছোট ও বাঁকা হয়, দাঁত দেরিতে ওঠে এবং দাঁত হয় অপুষ্ট। তাছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় প্রসূতি মায়ের খাবারেও যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকা আবশ্যক। তাই শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য দেশীয় কলমিশাক অত্যন্ত উপকারী সবজি।
অপুষ্টি বাংলাদেশের একটি মারাত্মক জাতীয় সমস্যা। এদেশের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর, কিশোরী অধিকাংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার। তবে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মহিলারাই বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। এমনকি দেশের বয়স্ক লোকেরাও পুষ্টির অভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারছে না। তাই দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ সময় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্যান্য শাকসবজির পাশাপাশি বেশি করে কলমিশাকও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মো. আবদুর রহমান
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, তেরখাদা, খুলনা