এ জেলার আগর-আতরের চাহিদা বাড়ছে বিদেশেও

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

ফিচার

এ জেলার আগর-আতরের চাহিদা বাড়ছে বিদেশেও

  • মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুগন্ধি গ্রাম সুজানগর। আগর-আতরের সুগন্ধ ভাসছে এ গ্রামের বাতাসে। সুজানগর গ্রামকে আগর-আতরের সূতিকাগার বলেও অনেকে মনে করেন। যেখান থেকে প্রস্তুতকৃত আতর মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার দখল করতে সক্ষম হয়েছে। তবে শুধু সুজানগরই নয়, এর আশপাশের বিভিন্ন গ্রামেও এই আতর উৎপাদনের নতুন কারখানা গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। বংশপরম্পরায় এখানকার বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে জড়িয়েছেন এ ব্যবসার সাথে। আশে-পাশের এলাকায় এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়লেও সুজানগরই হচ্ছে আগর-আতরের মূল কেন্দ্র। এখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ব্যবসার বিস্তার লাভ করছে।

প্রাকৃতিকভাবে আগর গাছ থেকে আগর কাঠ পেতে হলে প্রায় ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। গাছ থেকে আগর সরবরাহের পর তা প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বাটালি ও ছুরির সাহায্যে যে কাজ করা হয় তখন মূল আগরের কষও উঠে আসে। উঠে আসা অংশগুলোকে স্থানীয়ভাবে চুড়ন  বলে। ওই চুড়ন থেকেই আতর তৈরি হয়। চুড়নকে ভালো করে প্রথমে শুকিয়ে রাখা হয়। তারপর একটি বড় পাত্রে কিছুদিন ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর এক বিশেষ ধরনের ঢেঁকিতে ছেঁটে এটাকে গুঁড়ো করা হয়। সবশেষে এই গুঁড়োকে আতরের ডেগে জাল দিয়ে বাষ্পীয় পাতন পদ্ধতিতে আতর বের করা হয়। কিন্তু বর্তমানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে কম সময়ে আগর গাছ থেকে আতর উৎপন্ন করা হয়। রোপনের পর গাছের বয়স ৩ বছর হলে আগর গাছের গায়ে বড় লোহার প্যারেক গেঁথে দিতে হবে। প্যারেক বসানোর ৪/৫ বছর পর এসব গাছ থেকে নির্যাস পাওয়া যায়। প্রতি কেজি নির্যাস থেকে এক তুলা আতর পাওয়া যায়। প্রতি কেজি আগর কাঠের দাম দু’শ থেকে এক লাখ টাকা আবার প্রতি কেজি আতর পাঁচশ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এভাবে বছরে উৎপাদন করা হয় দুই থেকে আড়াই হাজার তুলা আতর, যার আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা। প্রতি তুলা আতরের সর্বোচ্চ মূল্য ছ’হাজার টাকা।

আগর কাঠকে কেন্দ্র করে শিল্প স্থাপনের প্রচেষ্টা দেখা গেছে একমাত্র বড়লেখার সুজানগরে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে আগর-আতর শিল্প প্রতিষ্ঠার পর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই শিল্পের প্রসার ঘটছে। মৌলভীবাজার বড়লেখা সালদিঘার  আগর ব্যবসায়ী, আবদুল কুদ্দুছ বলেন অত্যন্ত দামি এ শিল্প সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তেমন এগুতে পারছে না। সরকারের একটু সহযোগিতায় এ আগর-আতর শিল্প হয়ে উঠতে পারে আমাদের অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ শিল্পের বিকাশে গ্যাস, শ্রমিক  সংকট, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব সহ রয়েছে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা। এখানে উৎপাদিত আতর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে স্থান করে নিয়েছে।

সুজানগর গ্রাম ছাড়াও সালদিঘা, রফিনগর, হাশেমপুর, বড়তল, চিন্তাপুর, বাগমারা সহ আশপাশের গ্রামের কেউ না কেউ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কেউ গাছ কিনে কারখানায় বিক্রি করেন, কেউবা নিজের বাড়িতে ছোট্ট পরিসরে স্থাপন করেছেন কারখানা, আবার কেউবা মজুতদার, উৎপাদিত আতর কিনে বিক্রির জন্য বিদেশে পাঠান। কেউ কেউ অন্যের কারখানায় শ্রম দিয়েও জড়িয়ে আছেন এই ব্যবসার সাথে। প্রতি তুলা ছ’হাজার টাকা মূল্যের এ আতর রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে। রফতানি করে অর্থ আয়ের আশায় আগর-আতর ব্যবসার সাথে জড়িয়েছেন সুজানগর সহ আশে-পাশের ৮-১০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।

আগর-আতর উৎপাদনকারীরা জানান, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুজানগরে আগর ক্লাস্টার পরিদর্শনে এসে এটিকে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেন। ২০১৪ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় আগরকে শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়। ২০১০ সাল থেকে এসএমই ফাউন্ডেশন মাঠপর্যায়ে এ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

 

 এ. এস. কাঁকন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads