নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা নেওয়ার সময় নতুন সিম রিপ্লেসমেন্ট শুল্ক হিসেবে গ্রাহককে যে ১০০ টাকা দিতে হয় তা মওকুফের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি। আর এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ হতে কারিগরি নির্দেশনা বাস্তবায়নের একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বিটিআরসিকে। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্দেশনা সংযুক্তি করে এনবিআরের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত ১০ অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ঊর্মি তামান্না স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিটিআসরিকে পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে সংযুক্ত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রীর ডিও পত্রের ওপর অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে উল্লিখিত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, ‘প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা এক্ষেত্রে কর না নিতে পারি কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে কোনো সিমকার্ড বদলাচ্ছে সে হিসাবটি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করবে।’ এ ছাড়া বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এই চিঠিটিতে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স উইংয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এমএনপি সেবায় নতুন সিম রিপ্লেসমেন্ট শুল্ক হিসেবে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ টাকা শুল্ক মওকুফের জন্য অর্থমন্ত্রীর ইতিবাচক সাড়ার কথা চিঠির মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। পত্রের বক্তব্য বিশ্লেষণান্তে কমিশন প্রয়োজনীয় কারিগরি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে এমএনপি সেবা প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাবরুর হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে গত সপ্তাহের শেষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান এক বৈঠকে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে তারা গ্রাহকের কাছ থেকে শুল্ক হিসেবে নেওয়া ১০০ টাকা মওকুফের জন্য আবেদন করেছেন এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছেন। এই খরচ কমলে এমএনপি সেবা নিতে গ্রাহকদের আগ্রহ আরো বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এমএনপি সেবা নিতে গ্রাহকদের মাঝে সাধারণ সেবা আর জরুরি সেবা ক্ষেত্রভাগে আলাদা ১০০ টাকা অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জের বিষয়টি উল্লেখ করে মাবরুর হোসেন বলেন, বিটিআরসির গাইডলাইন অনুযায়ী সাধারণ সেবার ক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সময়সীমা ৭২ ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া থাকলেও প্রি-প্রেইড গ্রাহকদের ক্ষেত্রে তা ৩-৪ অথবা সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের জরুরি সেবা নিতে হচ্ছে না।
তবে কোনো পোস্ট-পেইড গ্রাহক যদি সাধারণ সেবার পরিবর্তে জরুরিভাবে এই সেবা গ্রহণ করতে চান, তাহলে তাকে অতিরিক্ত আরো ১০০ টাকা দিতে হবে, যা সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। আগামী মাস থেকে এই ইমারজেন্সি প্যাকেজটি চালু হবে বলে জানান তিনি।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, এমএনপি সেবা গ্রহণের জন্য এর আগে ৩০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হলেও সম্প্রতি এটি বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। যার মানে দাঁড়ায় প্রতিবার অপারেটর বদল করতে একজন গ্রাহককে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা ফি প্রদান করতে হবে।
এদিকে অপারেটর বদলের জন্য প্রথমেই একজন গ্রাহককে নতুন অপারেটরের কাছ থেকে সিম প্রতিস্থাপন করে নিতে হবে, যার জন্য বিটিআরসি নির্ধারিত ১০০ টাকা চার্জ প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিবার অপারেটর বদলের জন্য একজন গ্রাহককে সব মিলিয়ে গুনতে হবে ১৫৭ টাকা ৫০ পয়সা। পুরো কাজটি করার জন্য গ্রাহককে নতুন অপারেটরের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে যেতে হবে জানিয়েছে এমএনপি সেবা প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক।
উল্লেখ্য, এমএনপি সেবা চালুর জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১২ সালে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী এ নীতিমালার অনুমোদন দেন। এরপর গত বছরের নভেম্বরে নিলামের মাধ্যমে এ সেবা প্রদানের দায়িত্ব পায় ইনফোজিলিয়ন বিডি-টেলিটেক কনসোর্টিয়াম। লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে এমএনপি সেবা চালুর কথা থাকলেও বিভিন্ন অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে এমএনপি সেবাটি। এরপর কয়েক দফায় পিছিয়ে গত পহেলা অক্টোবর চালু হয় এ সেবা।