এগোচ্ছে স্বপ্নের কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ

কক্সবাজারের লিঙ্ক রোডে রেললাইন প্রকল্পের কাজের অংশবিশেষ

ছবি -বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

এগোচ্ছে স্বপ্নের কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ৫ অগাস্ট, ২০১৮

এগিয়ে চলেছে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে স্টেশন, রাস্তাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। একই সঙ্গে প্রকল্প কাজের আনুষঙ্গিক অনেক উন্নয়নমূলক কাজের নকশা প্রণয়নও শেষ পর্যায়ে। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই মহাপ্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। ফলে পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কক্সবাজারকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। তবে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রেললাইন প্রকল্পের কাজে ধীরগতি চলছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

রেললাইন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন জানান, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এখানে দুটি প্রকল্প- একটি দোহাজারী থেকে চকরিয়া আর দ্বিতীয় প্রকল্পটি চকরিয়া থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত। ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্পের জন্যই চাইনিজ কোম্পানিসহ স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় কাজ শুরু করেছে। লিঙ্ক রোড এলাকায় বেসমেন্ট রাস্তার কাজ, স্টেশন নির্মাণকাজসহ এখন কিছু কাজ দৃশ্যমান। এছাড়া ঈদগাহসহ অনেক জায়গায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়া দোহাজারী থেকে চকরিয়াতেও বেশ উন্নয়নকাজ চলছে। এসব কাজের জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় কাজের অবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

এদিকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে। আলাপকালে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের রেললাইন ছিল আমাদের স্বপ্নাতীত। বর্তমানে কক্সবাজারে রেললাইন প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান। তবে এলাকার মানুষ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে নানা কারণে ক্ষুব্ধ। এটা প্রশমন করতে হবে।

কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, আমরা অনেক আগে থেকে শুনে আসছিলাম কক্সবাজারে রেল আসবে; কিন্তু সেটি বাস্তবে রূপান্তর করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেললাইন প্রকল্প নির্মাণকাজ শেষ হলে কক্সবাজারের অর্থনৈতিক প্রবাহ অনেক বেড়ে যাবে, মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।

সুশাসনের জন্য নাগিরকের (সুজন) কক্সবাজার সভাপতি অধ্যাপক এমএ বারী বলেন, শুধু রেললাইন নয়, কক্সবাজারে এখন বেশ কয়েকটি মেঘা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলো কক্সবাজারের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বড় ভূমিকা পালন করবে। এর মধ্যে রেললাইন প্রকল্পটি মানুষের মনে বেশি স্থান করে নিয়েছে। কারণ এটি মানুষের অর্থনৈতিক প্রবাহের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। কক্সবাজারে রেললাইন চালু হলে পর্যটনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাই এ জেলার সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। তবে মাঝেমধ্যে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে নানা অনিয়মের কথা শুনতে পাই। এ ক্ষেত্রেও সরকারের নজর দেওয়া দরকার।

আলাপকালে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, কক্সবাজারের মানুষ সত্যি খুবই ভাগ্যবান। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী নিজে কক্সবাজারের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। কোনো প্রকার দাবি উত্থাপন ছাড়াই আমাদের জন্য রেললাইন চলে আসছে। কক্সবাজারের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজে রেললাইন দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। ইতোমধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে অনেক জায়গায়। আশা করি, প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদেই রেল আসবে কক্সবাজারে।

কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি জানান, কক্সবাজারে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এর মধ্যে রেললাইন অন্যতম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। তাই জনগণকে সেটা অনুধাবন করে সব সময় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের উন্নয়ন হবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রেললাইন প্রকল্পের কাজ অনেক দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমার দেখা মতে, অন্য কোনো প্রকল্পে এত দ্রুত কাজ হতে দেখিনি। এটা মূলত সরকারের আন্তরিকতার কারণেই সম্ভব হচ্ছে।

জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু জটিলতা এড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads