এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে পাঁচের আশা

ছবি : সংগৃহীত

তথ্যপ্রযুক্তি

আইসিটি খাতে রফতানি

এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে পাঁচের আশা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৩ মার্চ, ২০১৯

দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রফতানি ২০১৮ সালে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা টাকার হিসেবে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও সফটওয়্যার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই খাতে রফতানি আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে।

বেসিস সূত্রের বরাতে একটি দৈনিকের অনলাইন সংস্করণের এক খবরে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের বাজার বড় হচ্ছে। দেশের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই আবার দেশি সফটওয়্যার নির্মাতারা দখল করেছেন। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোর ক্ষেত্রে এখনো বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা থেকে গেছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ২৭টি ব্যাংকেই দেশি সফটওয়্যার ব্যবহূত হচ্ছে। দেশের সফটওয়্যার খাতে বেশি চাহিদা রয়েছে ইআরপি, বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন তৈরিসহ, ডিজিটালাইজেশনের কাজে ব্যবহূত সফটওয়্যার।

বেসিসের সভাপতি আলমাস কবীরের বরাতে প্রথম আলো নামের ওই দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন আমাদের সফটওয়্যার নির্মাতারা বিদেশেও রফতানি করছে। তবে আমাদের দেশ থেকে বড় ধরনের একক সফটওয়্যার রফতানি হাতেগোনা। এখন পর্যন্ত আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপিও, সার্ভিস রফতানি করছি বেশি। বিপিওর ক্ষেত্রে ব্যাংকের নানা কাজ, নানা রকম সেবা দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে গ্রাফিকস, ওয়েবের কাজ হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার এখনো রফতানির সব অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে আসে না বলে প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া সফটওয়্যার খাতের প্রকৃত আয় নিয়ে কোনো জরিপ নেই। এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হিসাবে ৮০০ মিলিয়ন (৮০ কোটি) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এক বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ মাইলফলক বছরের শুরুতেই পার হয়েছে বলে জানান বেসিসের সভাপতি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের টার্গেট বা লক্ষ্য ছিল, ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন রফতানি আয় করা। এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করা। সফটওয়্যার রফতানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়াসহ এ খাতের উন্নয়নে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ২০১৮ সালে সফটওয়্যার রফতানি বেড়েছে।

অবশ্য বেসিসের করা হিসাবের সঙ্গে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবের বড় পার্থক্য থাকে। ইপিবির হিসাবে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কল সেন্টারগুলোর সেবা রফতানির আয় দেখানো হয় না। কিন্তু বেসিসের অনানুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, ১ বিলিয়নের মাইলফলক পার হয়ে গেছে আগেই।

ইবিপি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কম্পিউটার সার্ভিস থেকে রফতানি ছিল ১০ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার। ইনফরমেশন সার্ভিসেসের রফতানি আয় ৩০ লাখ ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কম্পিউটার সার্ভিস থেকে মোট আয় ছিল ১৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। ইনফরমেশন সার্ভিসেস থেকে আয় ছিল ৬০ লাখ ৪৬ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে আর ইনফরমেশন সার্ভিসেসের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৯০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আগে আমাদের নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব কাজ করত। এখন আমরা সব দিক থেকেই নেতিবাচক ধারণাটিকে ইতিবাচক করতে পেরেছি। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এক বিলিয়ন ডলারের রফতানি করতে পারবে কেউ বোধ হয় বিশ্বাস করতে পারেনি। এখনো হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, আমরা ৫ বিলিয়নে পৌঁছাতে পারব। বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখাতে পারে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। এর বড় কৃতিত্ব হচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম।

মন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানির মানে শুধু সফটওয়্যারে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারেও উন্নতি করছে। দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে। আমরা বিদেশি সফটওয়্যারকে রিপ্লেস করছি। বিদেশি সফটওয়্যারের জায়গায় দেশি সফটওয়্যার প্রতিস্থাপন করতে পেরেছি। আমাদের সফটওয়্যার ১৮০টি দেশে রফতানি হয়। আমাদের সফটওয়্যার আয়ারল্যান্ডের পুলিশ ব্যবহার করে, সিকিউরিটির জন্য আমাদের সফটওয়্যার আছে, মোবাইল অপারেটররা ব্যবহার করছে। এটার গতি অতীতের সঙ্গে তুলনা করলে সম্ভাবনা এখন অনেক বেশি।

তবে এই খাতে ভারত, চীন ও ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি এখন ফিলিপাইন, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। দেশে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বাজারকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া ব্লকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে মানানসই প্রযুক্তি নিয়ে দেশি উদ্যোক্তাদের কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের সাইবার সিকিউরিটি ব্র্যান্ড রিভ অ্যান্টি-ভাইরাসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জিত চ্যাটার্জি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads