ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা

একই দিনে প্রশ্ন ছেপে ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষার সিদ্ধান্ত

উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রে ‘ভূতের আছর’

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলেও চলমান এইচএসসি ও সমমানের (উচ্চ মাধ্যমিক) পরীক্ষায় ‘ভূতের আছর’ লেগেছে। পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই কিছু কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে উল্টাপাল্টা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও এক বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বদলে অন্য বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিলি করা হয়েছে। আবার কোথাও পরীক্ষা শুরুর পর পুরনো সিলেবাসে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে ভুল শুধরে নেওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে কেটে গেছে অনেকটা সময়। কর্তৃপক্ষ কোনো অতিরিক্ত সময়ও দেয়নি শিক্ষার্থীদের।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা কলেজ কেন্দ্রে ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বিপরীতে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। আধাঘণ্টা পর বিষয়টি ধরা পড়লে প্রশ্নপত্র বদলে দেওয়া হয়। এখন নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে নির্ধারিত দিনেই। এর আগে গত ২৩ এপ্রিল নেত্রকোনায় ভূগোল বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও এমন তালগোল পাকানো হয়েছিল। এর ফলে ২৩ এপ্রিলের ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করে ১৪মে নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরীক্ষার হলে এমন ভুলের দায়ভার কে নেবে? ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের কি হবে? এমনিতেই পরীক্ষায় লিখে শেষ করা কষ্ট, সময় লাগে অনেক, লিখতেও হয় প্রচুর, তারপর যদি এমন ‘ভূতের আছরের’ খপ্পরে পড়ে সময় কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে বাকি থাকে কি? শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষায় যারা ভোগান্তির শিকার হলো, তাদের পরের পরীক্ষাগুলো কেমন হতে পারে? ওদের ভবিষ্যৎটাই বা কী? এসব প্রশ্নের উত্তর অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা বোর্ডের কারো কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা দেশে নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা যথারীতি আগামী ২৮ এপ্রিলই অনুষ্ঠিত হবে। বার বার কেন এমন ভুল হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আল মামুন জানান, জেলার আশুগঞ্জ সার কারখানা কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার ২৮ তারিখে ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নে ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রের পরীক্ষা শুরু হয়। আধাঘণ্টা পর প্রশ্ন পরিবর্তন করে পরীক্ষা নেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। এ সময় চারটি প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়। ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্র প্রশ্ন বিতরণ করে আধাঘণ্টা পরীক্ষা দেওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এ সময় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী বাইন হীরা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন।

কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশুগঞ্জ সার কারখানা কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রসায়ন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ট্যাগ অফিসার হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার রোকসানা আক্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। সকালে তিনি ও তার সঙ্গে কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান গিয়ে থানা থেকে প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করেন। পরে পরীক্ষা শুরু হলে কেন্দ্রে ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্র প্রশ্ন বিতরণ করে ২০০ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা শুরু করা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো পরীক্ষার হলে হইচই পড়ে যায়। পরে কক্ষ পরিদর্শকরা সকল প্রশ্ন তুলে নেন। প্রশ্ন পরিবর্তন করে ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র প্রশ্ন বিতরণ করে আধাঘণ্টা দেরিতে আবারো পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ সময় ২৮ তারিখের ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার চারটি প্রশ্ন খোয়া যায়।

আশুগঞ্জ সার কারখানা কলেজের পরীক্ষার্থী আলামিন ও জাকারিয়া বলেন, দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন পরিবর্তন করে ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র প্রশ্ন বিতরণ করে আধাঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ কারণে ভয়ে অনেকের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্র প্রশ্ন বিতরণ করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ পরীক্ষার্থীরা করেছে তা সঠিক নয়। আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী বাইন হীরা বলেন, দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন উঠিয়ে প্রথম পত্র প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে এই দুই কর্মকর্তা প্রশ্নপত্রে ‘ভূতের আছরের’ কথা অস্বীকার করলেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন। তিনি জানান, কীভাবে ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত প্রমাণ পেলে তাদের ব্যাপারেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন প্রশ্ন ছাপিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল ইসলামের ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে আন্তঃবোর্ডের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভূগোল পরীক্ষা স্থগিত : চলমান এইচএসসি পরীক্ষার ভূগোল প্রথম পত্র প্রশ্নের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন সরবরাহের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। স্থগিত হওয়া ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা আগামী ১৪মে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, নেত্রকোনার দুর্গাপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভূগোল প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রের পরিবর্তে দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। এ কারণে নির্ধারিত দিনের ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আগামী ১৪মে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, কীভাবে ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো তা খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলমান এইচএসসির ভূগোল প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল গত ২২ এপ্রিল। কিন্তু নেত্রকোনার দুর্গাপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভূগোল প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রের পরিবর্তে ভুলবশত দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। ভুলটি বুঝতে পেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ভূগোল প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। বিষয়টি অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নতুন করে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষাটি নেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads