ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব

  • প্রকাশিত ২০ ডিসেম্বর, ২০২০

মাওলানা মাহাথির মোবারক

 

 

 

এই বৃদ্ধা পৃথিবীটা আজ নববধূর রূপ ধারণ করে আছে। দিন দিন তার বয়স বাড়ছে, আর হাঁটিহাঁটি পা পা করে পৃথিবীটা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলেছেন, এই পৃথিবীর বয়স না কি ৪৫০ কোটি বছর। কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সেও এসে তার রূপ আর সাজ-সজ্জা কমেনি। দিন দিন সে প্রতিটি মানুষের কাছে আরো প্রিয় হয়ে ওঠছে। দিন যত যায় তার সৌন্দর্য আর চাকচিক্য মানুষের কাছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে এসে মানুষের জীবনকে যেমনি ইতি টেনে দেয়। ঠিক তেমনি পৃথিবীর জীবনকেও ইতি টেনে দেবে বা ধ্বংস করে দেওয়া হবে। কিন্তু এই পৃথিবী ধ্বংসের আগে কিয়ামতের বিভিন্ন আলামত দেখা যাবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের আগে পৃথিবীতে দু ধরনের আলামত দেখা যাবে। একটি হলো আলামতে কুবরা বা বড় আলামত। আরেকটি হলো আলামতে সুগরা বা ছোট আলামত। এই ছোট আলামতের মধ্যে একটি হলো নারী নেতৃত্ব।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের আগে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি অগ্রগামী হয়ে যাবে। তারা তখন পুরুষের নেতৃত্ব দেবে।’ কিন্তু এটা কোনো দিন-ই ইসলামে জায়েজ নেই। অথচ বর্তমান বিশ্বে নেতৃত্বের দিক দিয়ে নারীরা অগ্রগামী। আল-কোরআনে সুরা আন-নিসায় বলা হয়েছ, ‘পুরুষরা নারীদের ওপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের ওপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।’ নেক্কার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সৎ উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ এবং প্রহার করো। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ। (সুরা আন-নিসা, আয়াত -৩৪)

বুখারি শরিফে নারীদের ক্ষমতা গ্রহণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, পারস্যবাসীরা যখন তাদের সম্রাটের মৃত্যুর পর তার কন্যাকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সংবাদ  শোনার পর মন্তব্য করেছিলেন, ‘যে জাতি তাদের শাসনক্ষমতা একজন নারীর হাতে সমর্পণ করেছে, তারা কখনো সফলকাম হতে পারবে না।’ এ কারণে আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কোনো নারীকে শাসন কর্তৃত্ব, খেলাফত অথবা রাজত্ব সমর্পণ করা ইসলামসম্মত নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের নেতারা হবেন তোমাদের সমাজের দুষ্ট ও নিম্নপ্রকৃতির লোক আর যখন তোমাদের শাসন কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে সমর্পিত হবে, তখন ভূগর্ভ তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠের চাইতে উত্তম হবে।’ (তিরমিযি) তাছাড়া নারীদের সবসময় পর্দার সাথে চলাফেরা করতে বলা হয়েছ। নারীদের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন লোকদের মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চাদর ঝুলিয়ে দেয়। এটা অধিক উত্তম রীতি। যেন তাদেরকে চিনতে পারা যায় এবং তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা না হয়। (সুরা আহযাব, আয়াত-৫৯) অন্যত্রে বলা হয়েছে, ‘তারা (নারীরা) যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ হয়ে পড়ে তা ভিন্ন।’ (সুরা নূর, আয়াত-৩১)

বিনা প্রয়োজনে মহিলাগণকে বাড়ির বাইরে বের হতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নারীরা গোপনীয় বস্তু। যখন সে বাইরে বের হয় তখন শয়তান তার গোপনীয়তা প্রকাশ করতে লেগে যায়।’ মহিলাদেরকে জাঁকজমক পোশাক পরিধান করে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো মহিলা সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করে কোনো সমাবেশের নিকট দিয়ে যাতায়াত করে যেন তারা এ ঘ্রাণ পায়, তাহলে সে ব্যভিচারিণী মহিলা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ) গাইরে মাহরামের সাথে কথা একান্ত প্রয়োজনীয় হলে পর্দার আড়াল থেকে বলতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমরা তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়ালে থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সুরা আহজাব, আয়াত-৫৩)

 

লেখক : খতিব মসজিদে বায়তুন নূর, মাওনা, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads