ইসলামী আদর্শে পরিচালিত হোক সমবায়

প্রতিবছর জুলাই মাসে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস পালিত হয়

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

ইসলামী আদর্শে পরিচালিত হোক সমবায়

  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই, ২০১৮

সমবায় হচ্ছে একাধিক লোকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে গঠিত কর্মপ্রচেষ্টা, যেখানে সমশ্রেণি বা সমপেশাভুক্ত কতগুলো মানুষ সৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য যৌথ উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ উপমহাদেশে ১৯০৪ সাল থেকে সমবায় কার্যক্রমের সূচনা হয়। তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের জেনারেল লর্ড কার্জন সমবায় ঋণদান সমিতি আইন ১৯০৪ জারি করেন। পরবর্তী সময়ে তদানীন্তন ভারত সরকার ওই আইনের কিছু অসুবিধা দূর করার নিমিত্তে পুনরায় নতুন করে ১৯১২ সালে সমবায় সমিতি আইন জারি করে। ১৯৪০ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদ উপরোক্ত আইনের ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন সাধন করে দ্য বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যাক্ট ১৯৪০ নামে সমবায় আইন পাস করে, যা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এবং স্বাধীনতার পরও আমাদের বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল। প্রতিবছর জুলাই মাসে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস পালিত হয়। দীর্ঘকাল আগে থেকে পালিত হলেও ১৯৯২ সালের ১৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম শনিবারকে আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস ঘোষণা করা হয়। দিবস ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সমবায় জোট গড়ে তোলা। একশ’টি দেশের ৭৬০ মিলিয়ন সমবায়ীকে এক ছাতার নিচে একত্রিত করা। কিন্তু আমাদের সমাজের অনেক সমবায় সমিতি ইসলামী অনুশাসন উপেক্ষা করে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এ কথা মনে রাখা উচিত, অসাধু নীতি অনুসরণ করে মানুষ কোনো দিন মানবতার সেবা করতে পারে না। অথচ মানুষের জীবনের সার্থকতাই হলো মানবতার সেবায়। 

অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অনেক সমবায় সমিতি মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। গঠন প্রণালির মধ্যে সততা কথাটি থাকলেও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সত্যবাদিতা ঈমানের প্রথম ও প্রধান শর্ত। যেখানে সত্যবাদিতা নেই, সেখানে ঈমান ও ইসলাম নেই। মনে রাখা উচিত, সত্যই সৌন্দর্যের উৎস। আর সৌন্দর্যই জীবনের মূল বৈশিষ্ট্য। সত্যই জীবনকে মিথ্যা থেকে পৃথক রাখে, অন্যায়, অসুন্দর থেকে আলাদা করে। মিথ্যায় অন্তর কলুষিত হয়, সত্যের আলো বিদূরিত হয়। মিথ্যা সাক্ষ্যদান আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার ন্যায় জঘন্য অপরাধ। কেননা, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের ফলে নির্দোষ ব্যক্তি শাস্তির সম্মুখীন হন অথবা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, অথবা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এ ছাড়া অনেক সমবায় সমিতির মধ্যে আমানতদারি খুঁজে পাওয়া যায় না। যে গুণাবলি মানুষের মানবিক মর্যাদা বাড়িয়ে দেয় তন্মধ্যে আমানতদারি উল্লেখযোগ্য। আমানত হলো সাধারণভাবে গচ্ছিত জিনিসের সংরক্ষণ ও হিফাজত করা, খিয়ানত না করা, যার প্রাপ্য তার কাছে হুবহু ফিরিয়ে দেওয়া। আমাদের অধিকাংশ সমবায় সমিতি মানুষের সঙ্গে দেওয়া সন্ধি বা চুক্তি ভঙ্গ করে। মানুষের মধ্যে শান্তি ও সম্পত্তি প্রতিষ্ঠার আরেকটি মাধ্যম হলো সন্ধি। সামাজিক, ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সন্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। সন্ধি বা চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করা উচিত নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং প্রতিশ্রুতি পালন কর, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ 

আমাদের সমাজের প্রতিটি সমবায় সমিতি বা উদ্যোগ যদি ইসলামী নৈতিকতার আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত হতো, তাহলে সমাজের মানুষের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারত। এ কথা সর্বজন সত্য, সত্য ও ন্যায়ের পথে উৎসর্গকৃত জীবনই মনুষ্য জীবন। এর বিপরীত জীবনই নারকীয় জীবন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তারাই কামিয়াব। মানুষের ভালোবাসায় মানুষের জন্য আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ জীবনই পরম সারংসার। নিজের কথা ভুলে গিয়ে যে পরের জন্য জীবন দান করতে পারে, সেই তো প্রকৃত মানব। আমাদের সমাজের সমবায় সমিতি সম্পর্কে অনেকেরই অভিমত- তাদের কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। মনুষ্যত্ব বিকাশের এ সাধনায় সফলকাম হতে হলে চাই কথায় ও কাজে সমতা বিধান। কথায় যা বলব কাজেও তাই করব। এটাই মানব ধর্মের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু কথায় ও কাজে এক না হয়ে মনুষ্যত্বের সাধনায় মানুষ হবে অকৃতকার্য। ইসলামের বিধানে কোনো মুসলিম কথা দিয়ে তা ভঙ্গ করতে পারে না। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বরখেলাফ করা ধর্মের বিরুদ্ধ কাজ। পরিশেষে আল্লাহতায়ালার কাছে ফরিয়াদ করছি, আমাদের সমাজের সমবায় উদ্যোগগুলো ইসলামী আদর্শে পরিচালিত হয়।

মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ছিদ্দিকী 

গবেষক ও শিক্ষক 

[সহায়ক গ্রন্থ : ১. সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালা। ২. ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান (ইফা)। ৩. জীবন সৌন্দর্য (ইফা)। ৪. ইসলামই একমাত্র জীবনবিধান। ৫. ইসলামী ইনস্যুরেন্স। ৬. সাধারণ বীমা পরিচয়]

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads