ইন্টারনেটে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা

যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমগুলোতে হরহামেশাই নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নারী ব্যবহারকারীরা

প্রতীকী ছবি

ফিচার

ইন্টারনেটে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা

  • ইশতিয়াক আবীর
  • প্রকাশিত ২৪ জুন, ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে চারদিকে ইন্টারনেটের জয়জয়কার। আর তরুণ-তরুণীরাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে এগিয়ে। ইন্টারনেটের বদৌলতে নারী-পুরুষ সবাই এখন সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটস্ অ্যাপ ইত্যাদি যোগাযোগমাধ্যম বেশ জনপ্রিয় এখন। যোগাযোগের এ মাধ্যমগুলোতে হরহামেশাই নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। ইন্টারনেট জগতে সংঘটিত এই অপরাধগুলোকে সাইবার অপরাধ বলা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাইবার বুলিং। আর নারীরাই হচ্ছেন এর প্রধান শিকার।

অনলাইনে কাউকে অন্যায় কিছুতে প্রলুব্ধ করা বা কারো ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন করা ‘সাইবার বুলিং’য়ের আওতায় পড়ে।

শুরুতে টিনএজাররাই কেবল এ ধরনের হয়রানির শিকার হলেও পরে দেখা যায়, মধ্যবয়সীরাও প্রায়ই সাইবার বুলিংয়ের ভিকটিম হচ্ছেন। নারীরা, বিশেষত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৯ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী সাইবার বুলিংয়ের নিয়মিত শিকার। এ ছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। এদের মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশ অনলাইনে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করে অভিযোগ দায়ের করেন এবং বাকিরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে চুপ থাকেন।

বেশিরভাগ সাইবার বুলিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটে। তবে এর বাইরেও মোবাইল ফোনে বা ইমেইলেও এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

সাইবার বুলিংয়ের প্রভাব এত মারাত্মক যে, এর ক্রমবর্ধমান চাপে নারীদের মধ্যে ডিপ্রেশন, পড়াশোনায় অনীহা, ইন্সমনিয়া থেকে শুরু করে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

সাইবার বুলিং থেকে সতর্ক হোন

অনেক সময় আবেগে কিংবা অনলাইনে কারো সঙ্গে ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে কেউ যখন পিছপা হতে চান, তখন ভয় দেখিয়ে বা মানসিক নির্যাতন করে কোনো কিছুতে বাধ্য করার চেষ্টাই হচ্ছে সাইবার বুলিং। সম্মানের ভয়ে বা পরিবারের কথা ভেবে অনেকেই একসময় ‘চুপ’ থাকে বলে অপরাধীরা তখন আরো বেশি সুযোগ নেয়। সাধারণত অর্থ ও অন্যান্য সুবিধা আদায়ের পাশাপাশি সাইবার বুলাররা এ সময় অন্যদের দিয়েও একই ভিকটিমকে নির্যাতন করে থাকে।

যেহেতু শিশু-কিশোর ও তরুণীরা সাইবার বুলিংয়ের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়ে থাকে, তাই বাবা-মাকে সবার আগে সন্তানের বন্ধু হতে হবে। সাইবার বুলিং কী, অপরিচিত বা অনলাইন বন্ধুরা কেন অনিরাপদ এবং তাদের সঙ্গে কেন ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করা যাবে না- এসব সন্তানদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সম্ভব হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে হবে সন্তানদের সঙ্গে এবং সর্বোপরি নজর রাখতে হবে সন্তানের অনলাইন পদচিহ্নে। সন্তান আপনার আড়ালে ইন্টারনেটে কী করছে, কোন কোন সাইট বেশি ব্রাউজ করে কিংবা সেসব সাইটে ভয়ঙ্কর কোনো ফাঁদ পাতা নেই- একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে তাতে সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।

পাশাপাশি নিজের সচেতনতায় অনলাইনে আরো যেসব আচরণবিধি মেনে চলা উচিত, তা এখানে উল্লেখ করা হলো-

সাইবার বুলিং থেকে নিরাপদ থাকতে প্রথমত ব্যক্তি ও সামাজিক জীবন পৃথক করুন। ঠিকানা, কলেজ, ফোন নম্বর ইত্যাদি কখনোই প্রকাশ করা উচিত নয়।

সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় যে কাউকে অনলাইন ফ্রেন্ড বানানো থেকে বিরত থাকুন ও পোস্টের প্রাইভেসি ‘ফ্রেন্ডস অনলি’ রাখুন।

ফেসবুক বা অন্য কোনো ওয়েবসাইটে ছবি আপলোড করার আগে জেনে রাখুন এটি যে কেউ নামিয়ে বাজে এডিট করে আবার আপলোড করতে পারে।

গায়ে পড়ে কেউ খাতির জমাতে চাইলে অযথা কথা না বাড়িয়ে ব্লক করে রাখুন।

ফেসবুক, ইমেইল ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া আইডির পাসওয়ার্ড কখনো কাউকে জানাবেন না।

অনলাইন আইডি নিরাপদ রাখতে কঠিন পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি টু ফ্যাক্টর ভ্যারিফেশন ব্যবহার করুন।

অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কল ধরা থেকে বিরত থাকুন, একান্ত কেউ এসএমএস করে পরিচয় জানিয়ে কল দিলে কথা বলুন।

কেউ ফোনে বিরক্ত করলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দিন।

এসএমএস পাঠিয়ে বা কেউ অনলাইনে বিরক্ত করলে স্ক্রিনশট রেখে দিন।

এরপরেও কেউ বিরক্ত করার চেষ্টা করলে আইনি সহায়তা নিন।

 

আইনি সহায়তা যেভাবে নেবেন

সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কখনোই চুপ করে থাকার কথা ভাববেন না, সরাসরি আইনের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, চুপ করে থাকলে সমস্যা কমবে না বরং অপরাধী আরো সাহস পেয়ে যাবে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আইনগত সহযোগিতা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

 

হয়রানির শিকার যে কেউ সরাসরি বিটিআরসিতে যোগাযোগ করতে পারেন। বিটিআরসি ফোনে ও ইমেইলে দুভাবেই অভিযোগ করা যায়। বিটিআরসির কম্পিউটার সিকিউরিটি ইনসিডেন্স রেসপন্স টিম এ ধরনের সমস্যায় সহায়তা করে থাকে। বিটিআরসিতে হয়রানির অভিযোগ জানাতে কল করতে পারেন (০২)৭১৬২২৭৭ নম্বরে বা ইমেইল পাঠাতে পারেন contact@csirt.gov.bd ঠিকানায়। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে গোপনীয়তার সঙ্গে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads