আস্থা অনাস্থার নির্বাচন

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

আস্থা অনাস্থার নির্বাচন

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

ভোটের হাওয়ায় সরগরম দেশ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের হাট-বাজার, চায়ের দোকান, এমনকি বাড়ির আঙ্গিনাতেও শুধু ভোটের আলোচনা। উৎসবমুখর পরিবেশে হয়ে গেল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদান পর্ব। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ হয়েছে এবং বিএনপি শুরু করেছে। দুই জোটেই মনোনয়ন নিয়ে বিপাকে রয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। ছোট দলগুলোও তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করছে। এদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে বড় দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে হতাহতের খবর।

পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যেও ভোটের লড়াইয়ের প্রস্তুতি থেমে নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে নেমেছে। উভয় জোটই তাদের শরিক দলগুলোর জন্য ৭০টি করে আসন ছেড়ে দেবে বলে জানা গেছে। এবারের ভোটের লড়াইকে আবার দুই জোটের লড়াইও বলা যায়। মূলত এটি নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই। কারণ ক্ষমতাসীনদের জোটে ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নৌকা নিয়ে ভোট করবে। আবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর অভিন্ন মার্কা হবে ধানের শীষ। এখন ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে সংশয় কেটে গেছে। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরই ভোট হবে।

ভোটের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে দুটি মামলায় ইতোমধ্যে নিম্ন আদালত থেকে সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালত দণ্ড স্থগিত করলে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন। আবার জামিন দিলে তিনি মুক্তিও পেতে পারেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার নির্বাচন করতে পারার পুরো বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার হলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও জড়িত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দু’দফা সংলাপে খালেদা জিয়ার মামলায় সরকারপক্ষ জামিনে বিরোধিতা করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বে থাকাকে মেনে নিয়েই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ইতিহাস নেই। তবে এবার সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে বিরোধী দলগুলো আস্থা রেখেছে। কিন্তু বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে হঠাৎ অগ্নি-সহিংসতা দেখে সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়ে। নয়াপল্টনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে আসা মানুষের ভিড়ে বিএনপি অফিস ও তার সামনের রাস্তা ছিল লোকে-লোকারণ্য। পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে গেলেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বিএনপি কর্মীরাও মারমুখী হন। কয়েক ঘণ্টা সংঘর্ষে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছোড়ে। নয়াপল্টন যেন এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এদিন বিকালে নির্বাচন কমিশনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছে। কমে আসে উত্তেজনা। পরিস্থিতি শান্ত হলেও এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে উভয়পক্ষ। বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীসহ একাধিক মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, দুই পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস রয়ে গেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে কি-না, এসব প্রশ্ন থাকছেই। বেসামরিক প্রশাসন সরকারের পক্ষে কাজ করতে পারে। এই আশঙ্কাও আছে। নির্বাচন নিয়ে আশা-নিরাশার একটা দোলাচল চলছে। তবুও বিএনপি ভোটে গেছে। কারণ বিএনপি আশা করছে, নীরব ভোট বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। আওয়ামী লীগবিরোধী ভোটের সংখ্যা বেশি। আওয়ামী লীগ বলেছে, তাদের আমলে উন্নয়ন হয়েছে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য বিশেষ করে পদ্মা সেতুর সমাপ্তি টানতে আরেক মেয়াদে আওয়ামী লীগকে অনেকেই চায়।

আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলীয় কোন্দল। প্রতি আসনে অনেক প্রার্থী শুধু নয়; দলের ভেতরে চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের লড়াইও রয়েছে। মনোনয়নপত্র বিতরণের দিনে রাজধানীতে দুইপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে। ফলে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পথে হালুয়া-রুটির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কোন্দল একটা বড় কাঁটা। তবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থেকে নির্বাচন দেওয়ায় মনোবলের দিক থেকে দলটির নেতাকর্মীরা খুবই চাঙ্গা। বিএনপির দুর্বল দিক হলো সারা দেশে সাংগঠনিক দুরবস্থা। খালেদা জিয়া জেলে থাকা এবং তারেক রহমান বিদেশে থাকায় জিয়া পরিবারের কেউই নির্বাচনী মাঠে নেই। সিটি নির্বাচনে দেখা গেছে, ভোটের দিনে এজেন্টরা ভোটকেন্দ্রে থাকতে চান না। তাদের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করে। এবার বিএনপি কী কৌশল নেবে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচন ঘিরে বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ নেই। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত একেবারেই চুপচাপ। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা ও হতাশাকে উপেক্ষা করে ভারত ওই একতরফা নির্বাচনকে সাংবিধানিক দিক থেকে বৈধ বলেছিল। কিন্তু এবার ভারত নির্লিপ্ত। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনকালে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, বাংলাদেশের খবর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads