নির্বাচনী ভাবনা

সংগৃহীত ছবি

মুক্তমত

নির্বাচনী ভাবনা

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

আমার বয়স যখন মাত্র ১৮ বয়স ২ মাস, তখন একটি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ আসে। নির্বাচনটি ছিল ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন। জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার মজাই আলাদা ভেবে পাঞ্জাবি পরিধান করে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলাম। কিন্তু মুহূর্তেই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেল। আমি যে কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করব, সেখানে পক্ষ-বিপক্ষে গণ্ডগোল লেগে গেল। দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে কয়েকজন আহত হলো। গাড়িভর্তি পুলিশ এলো। পাঞ্জাবিওয়ালাদের তাড়াতে শুরু করল। কয়েকজন পাঞ্জাবিওয়ালাকে পিকআপ-ভ্যানে আটক অবস্থায় দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয়, যারা গণ্ডগোল করেছিল, তারা কেউ পাঞ্জাবি পরিহিত ছিল না! তখন আমার প্রশ্ন জাগল, পাঞ্জাবিওয়ালারা কী দোষ করল? সে উত্তর আমার আজো মেলেনি।

যাই হোক, পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার পর ভোট প্রদানের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। এলাকার পরিচিত অনেকেই আমাকে দেখে অবাক যে, আমিও ভোট দিচ্ছি! কিন্তু পরক্ষণে আমিও অবাক- আমার প্রথম ভোটটি আমি নিজ হাতে দিতে পারিনি। আমি ভোটকক্ষে ঠিকই ঢুকেছিলাম, আমার হাতে কালি ঠিকই লাগানো হয়েছিল, শুধু পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারতে পারিনি। কর্তব্যরত ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরাই তাদের নিজস্ব প্রার্থীর প্রতীকে সিল মেরেছিল, ব্যালট পেপার ভাঁজ করে দিয়েছিল। আমি শুধু ব্যালট পেপারটি বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়েই ভোট প্রদান সম্পন্ন করেছিলাম সেদিন। এই ছিল আমার প্রথম ভোট প্রদানের অভিজ্ঞতা। তারপর হতে ভোট প্রদান নিয়ে আমি বড়ই উদ্বিগ্ন এবং আশাহত, আজ অবধি আশাহত হয়েই আছি। এমন ভোট-ডাকাতি কখনো দেশের জন্য মঙ্গলকজনক নয়।

মিরপুর হতে উত্তরা ফেরার পথে গণপরিবহনে পাশে বসা একজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে বলতে নির্বাচন ও নির্বাচিত প্রার্থীদের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি আমাকে জানালেন, তার এলাকার নির্বাচিত এক প্রতিনিধি পরিচয়পত্র প্রদান বাবদ একশ করে টাকা নিয়ে থাকেন। ঘটনা প্রবাহে জানা গেল, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনে বিনিয়োগকৃত মূলধন উত্তোলন করা এবং লাভবান হওয়া। তার এমন নিম্নমানের কার্যক্রম এটা প্রমাণ করে, তিনি জনগণের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে আসনে বসেছেন, তাই জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমি মনে করি, ‘নির্বাচন’ শব্দটির সঙ্গে ‘জনগণের উন্নয়ন’ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নির্বাচন এলেই জনগণ উন্নয়নের ফাঁকফোকর খোঁজে। প্রার্থীরা ভোট চাইতে গেলে, ভোটাররা তাদের দাবিদাওয়াগুলো পেশ করে। জনপ্রতিনিধিরাও ভোট ও সমর্থন পাওয়ার জন্য উন্নয়নের আশ্বাস দেয়। সর্বাংশে তা বাস্তবায়ন হয় না বলে জনগণকে হতাশ ও বিভক্ত হতে হয় এবং একই কারণে প্রতিটি নির্বাচনে জনগণ নতুন প্রার্থীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বিপরীতটাও হয়। বিগত যে প্রতিনিধি সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য নিবেদিত থাকেন, সে এলাকায় তার প্রতিদ্বন্দ্বী মেলানো কষ্টকর। বাংলাদেশে ঘন ঘন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কখনো জাতীয় নির্বাচন, কখনো সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। আর উপনির্বাচন তো লেগেই থাকে! সব নির্বাচনই দেশের মানুষের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাব ফেলে। তবে জাতীয় নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত গড়ায়। জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যেকেই  প্রত্যাশা করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা, ভাঙচুর কিংবা অযথা মামলা-মোকদ্দমা কাম্য নয়। নির্বাচনী সব বিধিবিধান গ্রাহ্য করেই প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে আসা প্রয়োজন। জনগণের ভোট কিনে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে যারা নির্বাচনে আসবে, তাদের বয়কট করা বাঞ্ছনীয়।

জাতীয় নির্বাচনের কথা বলি আর ছোটখাটো যেকোনো নির্বাচনের কথাই বলি, জনগণকে প্রার্থী নির্বাচনে সৎ হতে হবে। ভোট বিক্রি করে জনপ্রতিনিধির কাছে উন্নয়ন প্রত্যাশা করা বোকামি। সৎ, যোগ্য ও আদর্শ নেতা খুঁজে প্রার্থিতা দিলে দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য তিনি উপকারে আসবেন। দেশে নানা রাজনৈতিক দল থাকবে, নানা মতভেদ থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এবং এসবের মধ্য থেকে জনগণকে যোগ্য নেতাকে নির্বাচিত করে জনগণের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট

md.angkon12@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads