আসছে নতুন ব্যাটারি!

শক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে

সংরক্ষিত ছবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

আসছে নতুন ব্যাটারি!

  • প্রকাশিত ৫ জুন, ২০১৮

শক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির বিকাশে শক্তির চাহিদার পালে লেগেছে হাওয়া। আর এই পালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ঘাম ছুটছে গবেষকদেরও। তবে সুইজারল্যান্ডের ইটিএচ জুরিখ এবং একটি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান এম্পারের বিজ্ঞানীরা টেকসই ব্যাটারি আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

গবেষকরা দুটি নতুন পদার্থ শনাক্ত করতে পেরেছেন, যা অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাটারির উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে। প্রথমটি হলো একটি ক্ষয়রোধী পদার্থ; দ্বিতীয়টি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের পদার্থ, যা ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের জন্য যা প্রযুক্তিগত প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে।

সাধারণত, অ্যালুমিনিয়াম ব্যাটারিতে তড়িৎবিশ্লেষ্য প্রবাহী পদার্থ অধিক সক্রিয়তা প্রদর্শন করে। আর স্টেইনলেস স্টিলের ক্ষয়ও ঘটায়। বিজ্ঞানীরা তাই ব্যাটারির এই পরিবাহী অংশের জন্য ক্ষয় প্রতিরোধী পদার্থ সন্ধান করছেন। তারা দেখেছেন, টাইটেনিয়াম নাইট্রাইড যথেষ্ট পরিবাহিতা প্রদর্শন করে। যেহেতু টাইটেনিয়াম এবং নাইট্রোজেন দুটোরই যথেষ্ট প্রাচুর্যতা রয়েছে, তাই উৎপাদনেও খরচের দিক থেকে সাশ্রয়ী হবে বলে আশা গবেষকদের।

পদার্থটি খুব সহজেই পাতলা স্তরের আকারে উৎপাদন করা যায়। আবার অন্যান্য পদার্থের ওপর সহজে পলিমার ফয়েলের মতো আবরণ বা প্রলেপ সৃষ্টি করা যায়।

গবেষক দলের প্রধান কভেলেঙ্কো মনে করেন, পরিবাহী পদার্থ প্রচলিত বা সুলভ ধাতুগুলো থেকেই উৎপাদন করা সম্ভব। টাইটেনিয়াম নাইট্রাইড যে কেবল অ্যালুমিনিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে তা নয়, এটি ম্যাগনেসিয়াম বা সোডিয়াম ব্যাটারি এমনকি উচ্চ ভোল্টেজের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

দ্বিতীয় নতুন পদার্থটি ব্যবহার করা যাবে অ্যালুমিনিয়াম ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্তের ইলেক্ট্রোড বা তড়িৎদ্বার হিসেবে। সাধারণত যে ব্যাটারির ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সেটির ধনাত্মক তড়িৎদ্বার সাধারণত হয় গ্রাফাইটের। তবে গবেষক দল পলিপাইরিন নামের এক পদার্থ যা মূলত হাইড্রোকার্বনের জাত পলিমার। গ্রাফাইটের চেয়ে ব্যাটারিতে এটি অধিক শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সক্ষম। পরীক্ষণ থেকে পাওয়া যায় এই পদার্থের নমুনায় এর আণবিক শিকল বিশৃঙ্খল দশায় থাকে। এই আণবিক শিকলগুলোর মাঝে প্রচুর ফাঁকা জায়গা থেকে যায়। ফলে ফাঁকা জায়গার ফায়দা নিয়ে আগের চেয়ে বড়সড় আয়ন তড়িৎবিশ্লেষ্য প্রবাহী হিসেবে প্রবেশ করানো যাবে। এতে তড়িৎদ্বারও সহজে আহিত হবে।

পলিপাইরিন ধারণকৃত তড়িৎদ্বারের অন্যতম সুবিধা হলো এটিকে সুবিধামতো ব্যবহার করতে পারা। বিশেষায়িত ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এটিকে গ্রাফাইটের চেয়ে অধিক সুবিধামতো পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে। কারণ, গ্রাফাইটকে ধাতু হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া বিকল্প থাকে না।

যেহেতু টাইটেনিয়াম নাইট্রাইড এবং পলিপাইরিন উভয়ই নমনীয় পদার্থ, তাই এদের কারণে উপযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ছে ব্যাটারি প্রযুক্তিতে।

বর্তমানে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির জনপ্রিয়তা রয়েছে, একই সঙ্গে হালকা অথচ কার্যকরী মাত্রায় শক্তি সংরক্ষণে করতে পারার জন্য। কিন্তু লিথিয়াম প্রকৃতিতে সুলভ নয়, এ কারণে এটি বেশ ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত বড় স্কেলে লিথিয়াম পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারকও। তৃতীয়ত, এ বিরল মৌল খনি থেকে নিষ্কাশন করাও সহজ নয় যতটা সহজ অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা সোডিয়াম। তাই লিথিয়াম ছাড়া বাকি তিন মৌলভিত্তিক ব্যাটারি প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দুয়ার বলে মনে করা হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সফল হলে কম খরচায় মিটবে বাড়তি শক্তির চাহিদা।

ফিজ ডট ওআরজি ও জিরো টু ইনফিনিটি অবলম্বনে আসিফ খান

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads