ডা. মো. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া
আবার এসেছে বর্ষা, আবার এসেছে ডেঙ্গু। বাংলাদেশে এ এখন নিয়মিত চিত্র। মশার প্রাদুর্ভাব কমানো যাচ্ছে না, ডেঙ্গুও ঠেকানো যাচ্ছে না। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক রোগী, মারা গেছে চারজন। হাসপাতালগুলো আবার ভরে উঠছে ডেঙ্গু রোগীতে। ডেঙ্গু এখনো আতঙ্কের নাম। আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে কিন্তু, বারবার সচেতন করা সত্ত্বেও মানুষ যথেষ্ট সচেতন হচ্ছে না। গ্রামের অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এখনো জানে না ডেঙ্গু হলে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য জানিয়ে দেওয়া হলো সাধারণ কিছু সতর্ক বার্তা, স্বাস্থ্য পরামর্শ। আমরা সবাই জানি ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। এডিস মশা এ ভাইরাস বহন করে। আমাদের দেশে বর্ষাকালে, অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে এ রোগী বেশি দেখা দেয়। শুধু আমাদের দেশেই নয়, রোগটি সারাবিশ্বেই আছে। সারাবিশ্বে বছরে ৪০০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর প্রতিরোধে এখনো কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
রোগের লক্ষণ : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খুব জ্বর হয়। তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে আরো বেশিও হতে পারে। সঙ্গে নিচের লক্ষণগুলোর অন্তত দুটি প্রকাশ পাবে।
* প্রচণ্ড মাথা মাথা। * চোখের পেছনের দিকে তীব্র ব্যথা। * জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। * মাংসপেশি বা হাড়ে ব্যথা। * হামের মতো ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। * নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে। * রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কমে যাবে।
লক্ষণগুলো রোগীর বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। ছোট বাচ্চা ও প্রথমবার আক্রান্তদের থেকে বয়স্ক শিশু ও দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের মাঝে রোগের তীব্রতা বেশি হয়। সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যেই জ্বরের তাপমাত্রা কমতে থাকে। তবে যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায় দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। * প্রচণ্ড পেট ব্যথা ও ক্রমাগত বমি। * ত্বকে দাগ দাগ। * নাক ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে। * বমির সঙ্গে রক্ত আসলে। * কালো বা আলকাতরার মতো পায়খানা হলে। * ত্বক ফ্যাকাশে, ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে হলে। * শ্বাসকষ্ট হলে
প্রতিরোধ : এ রোগের কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। এজন্য প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। প্রথমেই বাড়ির আশপাশের খোলা পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এসব জায়গায় এডিস মশা ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণীর খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। দিন ও রাতের আলোয় এ ধরনের জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়, তাই দিনের বেলায়ও মশারি ব্যবহার করা ভালো। মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নিরোধ ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
চিকিৎসা : এ রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। বেশির ভাগ ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। ব্যথা কমানোর জন্য একমাত্র প্যারাসিটামল খাওয়ানো হয়। আর প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার। পাশাপাশি রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর বারবার মুছে দিতে হবে। এ সময় অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ একবারে নিষিদ্ধ। খুব জটিল অবস্থা হলে হাসপাতালে নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনোরকম ওষুধই খাওয়ানো ঠিক নয়। ভয় পাবেন না, ঘাবড়াবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : এফসিপিএস (মেডিসিন), এফসিপিএস (গ্যাস্ট্রো), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল