অভিজ্ঞ সরোয়ারের সঙ্গে লড়বেন আ.লীগের তরুণ সাদিক

বরিশাল সিটি নির্বাচনের পদপার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার ও সাদিক আবদুল্লাহ

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন

অভিজ্ঞ সরোয়ারের সঙ্গে লড়বেন আ.লীগের তরুণ সাদিক

  • কামাল মাছুদুর রহমান, বরিশাল
  • প্রকাশিত ১ জুলাই, ২০১৮

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) চতুর্থ নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। মেয়র পদে নবীন-প্রবীণ লড়াই এ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র এ নির্বাচনে কে হবেন নগরপিতা- বরিশাল নগরবাসীর মধ্যে এটাই এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ রাজনীতিতে ও বয়সে নবীন। অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বয়সে ও রাজনীতিতে প্রবীণ।

বিসিসি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে গত ২৮ জুন বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের কাছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ মোট ৮ জন মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার যখন মনোনয়নপত্র জমা দেন তখন তার সঙ্গে অন্য নেতারা থাকলেও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন, বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চানকে দেখা যায়নি। অবশ্য শিরিন, কামাল, চান- এরা সবাই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সরোয়ারকে ‘যোগ্য ও পারফেক্ট’ মনে করে কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে সরোয়ারের অনুসারীদের দাবি। যদিও মজিবর রহমান সরোয়ার কখনোই মেয়র পদে নির্বাচন করার কথা বলেননি বা আগ্রহ প্রকাশ করেননি বলে তারা জানান।

১৯৭৮-৭৯ সালে বিএনপির তৎকালীন পাটমন্ত্রী আবদুর রহমান বিশ্বাসের হাত ধরে সরোয়ার রাজনীতিতে আসেন। শ্রমিক নেতা হিসেবে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে আবদুর রহমান বিশ্বাস বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর ফলে আসনটি শূন্য হলে মজিবর রহমান সরোয়ার উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উত্থান ঘটে।

এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে রাষ্ট্রপতিপুত্র ডা. এহতেশামুল হক নাসিম বিশ্বাস বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর পর ১৯৯৮ সালে আকস্মিক তার মৃত্যু হলে শূন্য আসনে উপনির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি নিবাচিত হন। দুটি উপনির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট চারবার সংসদ সদস্য এবং ২০০৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তৎকালীন জাতীয় সংসদের হুইপ ছাড়াও তিনি ছিলেন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। কথিত আছে, বরিশাল সদর আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ার পরাজিত হননি। তার ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা-মামলা হয়েছে, জেল খেটেছেন বহুবার। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা হিসেবে নিজেকে বার বার প্রমাণ করেছেন। হয়তো সেই ভরসা থেকেই সরোয়ারকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন দিয়েছে দল।

উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ জানান, বরিশাল বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। দল যাকে ভালো ও যোগ্য মনে করেছে তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে। সবাই আমরা একযোগে কাজ করব দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য।

বর্তমান বিসিসির মেয়র আহসান হাবিব কামালের দলীয় কোনো পদ নেই এ মুহূর্তে। আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য-বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর সভাপতি ছিলেন। গত নির্বাচনের সময় অন্যান্য সিটির মেয়রের মতো বরিশাল সিটিতেও বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত তাকে কখনো জেলে যেতে হয়নি। বরিশালে গুঞ্জন রয়েছে, তিনি সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক ধরনের আঁতাত করে মেয়রের পদ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের তেমন কোনো চিত্র চোখে পড়েনি নগরবাসীর। আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরনের আমলে হওয়া উন্নয়ন মেয়র কামাল ধরে রাখতে পারেননি বলে নগরবাসী মনে করেন। চরম ব্যর্থ হয়েছেন নগরবাসীর মন জয় করতে। কেন্দ্রে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারের সঙ্গে গোপনে লিয়াজোঁ করে পূর্ণ মেয়াদ পার করে যাচ্ছেন কোনোরকম ঝামেলা, মামলা, জেল ছাড়াই। আরো অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে মেয়র আহসান হাবিব কামালকে খুব একটা দেখা যেত না। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা তার ওপর ছিল কিছুটা ক্ষুব্ধ। এসব কারণে তার ওপর কেন্দ্র ভরসা করতে না পেরে মেয়র মনোনয়ন হাতবদল হয়ে চলে যায় যিনি কখনোই প্রার্থী হতে চাননি সেই সরোয়ারের হাতে।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে সরোয়ার বলেন, যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় তা হলে তিনি জয়ী হবেন।

এদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রিয়মুখ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। রাজনীতিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী সরোয়ারের চেয়ে নবীন। তিনি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাদিকের রয়েছে পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। দাদা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন মন্ত্রী, পিতা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি- যিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদায়)। সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রায় তিন বছর আগে থেকেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড চষে বেড়িয়েছেন। খোঁজখবর রেখেছেন সব সময়। ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায় রয়েছে তার জনপ্রিয়তা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads