প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আগামী জুনে অনুষ্ঠেয় কিম জং উনের সম্ভাব্য সম্মেলন বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া প্রশাসন। ওয়াশিংটন পরমাণু বোমা নিরস্ত্রীকরণে মাত্রাধিক চাপ প্রয়োগ করলে উত্তর কোরিয়া এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কেসিএনএ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, উত্তর কোরিয়া কখনো একতরফা পরমাণু প্রকল্প পরিত্যাগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নেবে না।
দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিম কায়ে গাওয়ান জানান, ‘আমরা পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করলে অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। আমাদের অর্থনীতি সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোনো সহায়তার আশা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের জন বোল্টন উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার সম্মেলনে প্রভাব ফেলতে চাইছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এক বক্তব্যে উত্তর কোরিয়াকে লিবিয়া মডেল অনুসরণ করতে বলে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে। যদিও পিয়ংইয়ং বোল্টনের এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার কখনো লিবিয়া কিংবা ইরাকের মতো ভুল করবে না বলেও বিবৃতিতে জানান কিম। তবে পিয়ংইয়ংয়ের হুমকি সত্ত্বেও জুনের ১২ তারিখের সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্মেলন নিয়ে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত আছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হেথার নুয়ার্ট।
এদিকে কোরীয় উপদ্বীপে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সামরিক মহড়া শুরু করেছে। মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত পরমাণু বহনকারী বিমান ছাড়াও মোট ১০০ বিমান অংশ নেয়। এই মহড়ার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গতকাল বুধবার যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এই বৈঠকে এপ্রিলের ২৭ তারিখ নেওয়া সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন প্রশ্নে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। উত্তর কোরিয়ার এমন হঠাৎ সিদ্ধান্তে কোরীয় উপদ্বীপে অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার হুমকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। কারণ বৈশ্বিক কূটনীতি প্রশ্নে যখন দুই দেশের মধ্যে আপস রফা হয় তখন দুই দেশকেই ছাড় দিতে হয় ঐক্যের জন্য। কিন্তু এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়াকে একতরফা পরমাণু বোমা নিষ্ক্রীয় করতে হবে, বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েই চলছে।
গতকাল বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে আলোচনায় বসেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কুং হাওয়া। পম্পেও এবং ক্যাং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্মেলনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কোরীয় উপদ্বীপে দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কাজ করে যাবে এমন বক্তব্যও দেওয়া হয়।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের কোরীয় উপদ্বীপ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম মাউন্টের মতে, পিয়ংইয়ং মধ্যস্ততার শর্তগুলো আবার যাচাই-বাছাই করতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে খুব জটিল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। কারণ উত্তর কোরিয়া বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাইছে যে তারা একটি শক্তিশালী অবস্থান থেকে সম্মেলনে বসতে চাইছে। ইতোমধ্যে দেশটি তাদের সব পরমাণু বোমা পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের তিন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।