প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব

প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার

  • প্রকাশিত ৩০ জুলাই, ২০১৯

বাংলাদেশে দিন দিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এখনই রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের কর্মক্ষম অংশ হলো যুবশক্তি। এই যুবশক্তিকে অসার, অবশ রেখে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। আর বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবীতে দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। অথচ চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল সরবরাহে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকাররা ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে।

তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধন দরকার। কর্মমুখী শিক্ষা থাকলে শিক্ষার্থী প্রাত্যহিক জীবনে ছোটখাটো কাজ সম্পাদনে নিজেই সচেষ্ট হতে শেখে। দেশ ও জাতির প্রধান সম্পদ হলো এর দক্ষ জনশক্তি। পরিকল্পনা ছাড়া জনসাধারণকে দক্ষ শক্তিতে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাত্ত্বিক জ্ঞানের সঙ্গে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই শিক্ষার যথার্থ রূপান্তর ঘটানো যেতে পারে এবং জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করাও সম্ভব হয়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখজনক, আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কর্মবিমুখ। একটি জাতির টিকে থাকা ও অগ্রগতির জন্য যেমন প্রয়োজন অনেক সুশিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক, কর্মকার, কৃষক, কর্মচারী; তেমনি প্রয়োজন নির্ধারিত সংখ্যক সুশিক্ষিত শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, কর্মকর্তা ইত্যাদি। এ জন্য প্রয়োজন মৌলিক শিক্ষা পর্যায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

আর তাই শিক্ষাকে কর্মমুখী করে তোলা প্রয়োজন। শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিতদের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। কর্মমুখী শিক্ষাই কর্মসংস্থানের প্রধান সহায়ক। আর এ জন্য আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি—উভয় পর্যায়েই সহযোগিতাসহ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। এ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ঘরের কাজ থেকে শুরু করে বাইরে ক্ষেতে-খামারে, শিল্পকারখানায় এবং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিনা সংকোচে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।

সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার নিশ্চয়তায় এখন কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদা ও শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সমন্বিত একটি নীতিমালার আলোকে শিক্ষালয় স্থাপনের অনুমোদন ও তা সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। পেশাগতভাবে দক্ষ করতে সিলেবাসে পরিবর্তন আনা দরকার। আবার দেশের ডিগ্রিগুলো বিষয়ভিত্তিক না হওয়ায় নিয়োগদাতাদেরও দক্ষকর্মী বাছাই করতে হিমশিম খেতে হয়। এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতে সিলেবাসে পরিবর্তন আনাসহ প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

এখন একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শ্রমবাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা দরকার। বর্তমান শ্রমবাজারের সঙ্গে সংগতিহীন শিক্ষাব্যবস্থাকেই বেকারত্বের জন্য দায়ী করা হয়। বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সেক্টর : অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব স্কিলস ইন দ্য ফরমাল সেক্টর লেবার মার্কেট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাকরির বাজারে চাহিদা না থাকলেও কলা ও মানবিক, প্রকৌশল ও কারিগরি, সমাজবিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষার প্রতি ঝুঁকছেন দেশের শিক্ষার্থীরা। আবার চাহিদা থাকলেও বিজ্ঞান, সাধারণ শিক্ষা, ব্যবসায় প্রশাসন, চিকিৎসা কিংবা লোকপ্রশাসন বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। ফলে খাপছাড়া এ শিক্ষাব্যবস্থা বাড়াচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।

এমতাবস্থায় কারিগরি ও বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি দরকার। প্রধানত উচ্চ শিক্ষিতরাই এই ভিন্ন ধরনের বেকারত্বের শিকার। পাবলিক ইউনিভার্সিটির পাঠ্য বিষয় ও বিভাগের ফিরিস্তি দেখলে মনে হয় তারা এখনো অন্য জগতে বাস করেন। কারণ নানা ধরনের বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও এগুলো নিয়ে ফিল্ডে চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এমন বিষয় ও বিভাগ চালু করতে হবে যাতে পড়াশোনা করে বের হয়ে কাউকে বেকার থাকতে না হয়। সুতরাং কর্মসংস্থানের চাহিদা ও জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় দরকার। সংশ্লিষ্টজনদের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads