টেকসই অর্থনীতির পথে দেশ

ফাইল ছবি

সরকার

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

টেকসই অর্থনীতির পথে দেশ

  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি, ২০২০

লন্ডনভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলছে, ২০৩২ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল (ডব্লিউইএলটি)-২০১৯’ শীর্ষক তালিকার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের এই অর্জনের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। দেশের সচেতন নাগরিকরদের নিশ্চয়ই মনে পড়ছে আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সেই পুরোনো কথাটি— ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি।’ না হেনরি কিসিঞ্জারের সে কথা গেল বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে সিআরবিআর-এর এমন তথ্যে আবারো ভুল প্রমাণ হলো। বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, স্বনির্ভরতার পথে তরতর করে এগিয়ে যাওয়া এক রোল মডেল। গত ৭ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে তা স্পষ্ট হলো।

তিনি বলেছেন, ‘অর্থনীতির ভিত্তি আজ মজবুত।’ ছোটখাটো অভিঘাত এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফ-এর তথ্যমতে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসি’র হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। অপরদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। এসব খতিয়ান এটাই প্রমাণ করে যে, বর্তমানে দেশের অর্থনীতি টেকসই অবস্থানে রয়েছে এবং ক্রমশ একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছে।

অবশ্য একথা মানতে হবে, বাংলাদেশের এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে মূল অবদান রেখেছে দেশের জনগণ। যোগাযোগব্যবস্থার বিপুল উন্নতিতে বাজার অর্থনীতির ছোটবড় বিনিয়োগ পৌঁছে গেছে একেবারে তৃণমূলে। গ্রাম হয়ে যাচ্ছে শহর। কর্মসংস্থান বেড়ে চাহিদা তৈরি হয়েছে ভোগের, তাই গড়ে উঠেছে ব্যবসাকেন্দ্র। দেশের পোশাক শিল্প, কৃষি, ফলফলাদি, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্পসহ সর্বস্তরে বেড়েছে কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যয় সংকোচন হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবন-জীবিকার সর্বক্ষেত্রে। বেড়েছে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির হার। যে কারণে বেড়েছে দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বে যোগাযোগের এই আমূল পরিবর্তনেই বদলে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতির চেহারা।

শিল্পবান্ধব স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশও এই অগ্রযাত্রার আরেক নিয়ামক। সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধির বিবেচনায় বাংলাদেশের এই অভাবনীয় অগ্রযাত্রা সত্যিই আনন্দের ও সুখকর। এই অগ্রযাত্রার পেছনে দেশের ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার ও উৎপাদনমুখী অর্থনীতি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ভূমিকাই প্রধান কারণ বলে আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহও আরেকটি উন্নয়ন সূচক হিসেবে চিহ্নিত হবে। মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে বিদেশে শুধু শ্রমিক প্রেরণই যথেষ্ট নয়, প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারেও সচেষ্ট হতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বৈধ পথে আনতে সরকার সম্প্রতি পেপালের জুম সার্ভিস চালু করেছে, এতে হুন্ডি বা অবৈধ পথে অর্থ আসা বন্ধ হবে বলে আমরা আশা করি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরো বাড়াতে বিদেশে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এটা জরুরি। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক সূচককে করবে সমৃদ্ধ এবং সহায়ক হবে শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী আয়কে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। 

তবে বর্তমান সরকারের ‘গ্রাম হবে শহর’ নীতি এবং তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এখানে অন্যতম নিয়ামকশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। দেশের শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও যোগাযোগব্যবস্থার আরো উন্নতির পাশাপাশি সুশাসনের চর্চা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা আরো বহুমাত্রিক উজ্জ্বলতা পাবে। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সেই দিকনির্দেশনাই আমাদেরকে আশান্বিত করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads