শোবিজ

‘৭০ বছরে এসেও আমাকে আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হয়’

  • বিনোদন প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৮ ডিসেম্বর, ২০২০

‘৫০ বছর একটা জায়গায় কাজ করেও টাকা পয়সা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায় না। নিরাপত্তা নেই। ৭০ বছর বয়সে এসেও আমাকে টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হয়। যারা অনেক বড় তারকা, তাদেরও একটা সময় এসে অভাবে দিন কাটাতে হয়। শিল্প চর্চা করে যদি এভাবে ভুগতে হয় তাহলে তো দিনে দিনে এই জায়গাটির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও ভরসা কমে যাবে। এখানে যোগ্য লোকের অভাব দেখা যাবে। এর জন্য সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে আর্থিক নিরপাত্তার বিষয়টি’-অভিনয় শিল্পী ও কুশলীদের আর্থিক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন দেশের বরেণ্য নাট্যজন মামুনুর রশীদ।

শিল্প সংস্কৃতির বিকাশের নিমিত্তে সরকারিভাবে টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে অভিনয় শিল্পী সংঘ। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নিকেতনে অবস্থিত সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

সেখানে মধ্যমণি হয়ে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সংঘের উপদেষ্টা বরেণ্য নাট্যজন মামুনুর রশীদ। আরো ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রাণ রায়।

সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে গিয়ে মামুনুর রশীদ অভিনয় জগতে শিল্পী ও কুশলীদের আর্থিক নিরাপত্তার অভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সারা জীবন কাজ করে সবাই নিরাপত্তা চায়। কিন্তু আমরা যারা অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা সেটা পাই না। কেউ কেউ তারকাখ্যাতি পেয়ে আর্থিক নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করতে পারেন। সেটা সংখ্যায় খুবই কম। অনেকে তারকাখ্যাতি নিয়েও অর্থের অভাবে থাকেন। শেষ বয়সে কষ্ট করেন।

দেশের বিখ্যাত তারকা ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। তিনিও শেষ বয়সে টেলিফিল্মে কাজ করেছেন, অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন। সবটা অভিনয়ে বা শিল্পের সঙ্গে থাকার জন্য নয়। অনেকটা অভাবেরও ব্যাপার রয়েছে এখানে। আমরা এই বুড়ো বয়সে তো আর নতুন করে চাকরি বা ব্যবসা করতে পারি না। যেটা পারি সেটার উপরই নির্ভর করতে হয়। এই বিষয়টি আপনারা আশা করি অনুধাবন করবেন এবং সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। শিল্পী মর্যাদা দেওয়া উচিত। শিল্পীরা অর্থের অভাবে ভুগবে, দ্বারে দ্বারে সাহায্যের জন্য ঘুরবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাদের জন্য সরকারিভাবে তহবিলের ব্যবস্থা করা হোক বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের দাবিদাওয়া লিখিত আকারে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম। সেখানে জানানো হয় কী ধরনের কল্যাণ তহবিল প্রত্যাশা করছেন শিল্পীরা।

সেখানে বলা হয়, কল্যাণ তহবিলটি এমন হোক যেন ৬৫ বছর বয়স্ক শিল্পীদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান করা যায়। দুর্ঘটনায় আহত বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিল্পীদের যেন চিকিৎসা ভাতা প্রদান করা যায়। শারীরিক এবং মানসিক বিপর্যয়ের কারণে কর্মে অক্ষম শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে তাদের জন্যও যেন মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা হয়। কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন বরাদ্দ আকারেও হতে পারে কল্যাণ তহবিলটির ধরন। প্রতি অর্থবছরে সরকার কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ দিয়েও গঠিত হতে পারে কল্যাণ তহবিলটি।

এ বিষয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, অনেক দিন ধরেই আমরা টিভি শিল্পী ও কুশলীদের জন্য এই তহবিলের দাবি করে আসছি। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে আমাদের। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। তাই আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি বিষয়টির দিকে মনোযোগ দেওয়ার জন্য। অন্যথায় আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, আমাদের দাবি যৌক্তিক। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে তথা শিল্প সংস্কৃতি বিকাশের নিমিত্তে টেলিভিশন শিল্পী কল্যাণ তহবিল গঠন করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। আশা করছি তিনি আমাদের দাবি বিবেচনা করবেন এবং দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষকে বিনোদন দিয়ে আসা টিভি ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের পাশে থাকবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads