করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার কারণে সীতাকুণ্ডের সবজি চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মূলত লকডাউনকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ব্যবস্থা অনিয়মিত হয়ে পড়ায় শত শত কৃষকের হরেক রকমের শবজি জমিতে নষ্ট হচ্ছেই। এতে কৃষককেরা ক্ষতির পরিমাণ গুণতে গুণতে দিশেহারা।
সীতাকুণ্ডের সবজি চাষে খ্যাত এলাকা বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বারৈয়াপাড়া, হেদায়নগর ও বহরপুর, সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাকখালি, বগাচতর ও কেদারখীল, পৌরসদরের ইদিলপুর, শিবপুর, নলুয়াপাড়া ও মহাদেবপুর, মুরাদপুর ইউনিয়নের দোয়াজিপাড়া, গুলিয়াখালি ও রহমতনগর গ্রাম। এইসব গ্রামে মৌসুমী সবজি টমেটো, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, তরুল, তিতকরলা, বরবটি, কুমড়া, লাউ ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসদরের নলুয়াপাড়া ও ইদিলপুর, মুরাদপুরের দোয়াজিপাড়া ও গুলিয়াখালি এলাকায় দেখা যায় টমাটো ক্ষেতগুলির প্রত্যেক গাছগুলিতে পাকা পাকা লাল টমেটোর ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। তিতকরলার চাংবাধা বাশেঁর জালিতে ঝুলছে হলুদ বর্ণের পাকা করলা অনুরূপ চাংবাধা বাঁশের জালিতে শসা ক্ষেতে লালছে হলুদ পাকা শসা। জমিতে বদলা নিয়ে নিজে গিয়ে পরিশ্রম করে ফসল তুলে বাজারজাত করার জন্য আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। শহরের পাইকাররা আসছে না বলে স্থানীয় পাইকারের কাছে অতি কম মূল্যে সবজি বিক্রি করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা যায়।
টমেটো চাষে লোকসানের সম্মুখীন গুলিয়াখালি এলাকার মো. আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মো. আলী দেড় কানি (২ শ‘ ৪০ শতক) জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। নিজের জমানো ৫০ হাজার( গতবারের টমাটো চাষে লাভের টাকা) এবং সমিতির লোন ১ লাখ টাকা নিয়ে টমাটো চাষ করেছেন এই চাষী। জমির খাজনা সার বীজ, সেচ ও বদলা মিলে সব খরচ খরচে হয়ে গেছে। লকডাউনের আগে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ৩ হাটে বিক্রি করেছেন ২৩ হাজার ৫০০ টাকার টমেটো। লকডাউনের পরে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ২ হাটে বিক্রি করেছেন ১৫শ টাকা, হাটে নিয়ে যেতে পরিবহন খরচ হয়েছে ৬০০ টাকা বদলা ২ জন ১১ শ টাকা, লোকসান হয়েছে ২শ টাকা, এই জন্য তার পরেরহাট হতে আর টমাটো তোলা হয় না বলে হাটে নিয়ে যাওয়া হয় না। স্থানীয়রা যে যা চায় তা দিয়ে দেয়, গাছেই শুকাচ্ছে টমাটো।
তিনি বলেন, লকডাউনে আমি ডাউন হয়ে গেছি।
মুরাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বলেন, করোনার লকডাউনে আমার মুরাদপুরের গুলিয়াখালি ও গুপ্তাখালি এলাকায় অনেক চাষী প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো প্রণোদনা নেই তবে সংকটকালীন এই করোনা‘র সময়ের জন্য বীজ ও সারে যে প্রণোদনা রয়েছে তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবারে মুরাদপুর ইউনিয়নে ২৬০ পরিবারের জন্য এই তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি ও উদ্ভিজ সংরক্ষণ সহকারি কর্মকর্তা শুভাষ চন্দ্র জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে কোনো প্রনোদনা নেই তবে আউশ ধান উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বীজ, সার প্রণোদনার কৃষক সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অন্যদিকে মঙ্গলবারের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মহন্তের হাটে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আগত সবজির পাইকাররের সমাগম হত সেখানে ‘লকডাউনে’ একেবারেই ক্রেতা শুন্য। স্থানীয় কৃষকরা স্থানীয় পাইকারের কাছে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যার বাজার খুচরা মূল্য টমাটো প্রতি কেজি ৫ টাকা, তিত করলা ১৫-২০ টাকা, বরবটি ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা, ঝিঙ্গা ও চিচিঙ্গা ২০ টাকা। যা লকডাউনের আগে টমোটো ছাড়া সব সবজি ছিল ৫০ টাকার বেশি।
এই প্রসঙ্গে মহন্তের হাটের সবজি বাজারের ইজারাদার দেলোয়ারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, যেখানে প্রতি হাটে বাইরের ১০০ বেপারী আসত সেখানে আসে ২ থেকে ৪ জন। বিক্রেতাদের সবজি বাইরে যেতে পারছে না বলে দামে সস্তা।