‘ভিক্ষা করব বিদেশ নয়’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব

সংরক্ষিত ছবি

প্রবাস

সৌদি আরবের শ্রমবাজার

‘ভিক্ষা করব বিদেশ নয়’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন আর তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরছেন ৮১ নারী ও ৪৭ পুরুষ কর্মী। ফিরে আসা নির্যাতিত এসব নারীর মধ্যে তিনজনের অবস্থা খুবই নাজুক। বিমান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কুর্মিটোলা হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়। গত রোববার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে এয়ার এরাবিয়ার এ৯-৫১৫ বিমানে করে এই নির্যাতিতরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ নিয়ে চলতি মাসে দেশটি থেকে ফিরলেন নির্যাতিত ১১৬ নারী। গুরুতর অসুস্থ তিন নারীর মধ্যে দু’জন হলেন- সুনামগঞ্জের হালিমা, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের ফাতেমা। এক নারীর পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। কথা বলতে পারছেন না। এসব নারীর প্রত্যেকের বয়স ২০ বছরের নিচে।

ফেরত আসা নারীরা বলেন, সংসারে সচ্ছলতা আনতে উচ্চ বেতনে গৃহকর্মীর কাজ করতে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন তারা। সৌদি নিয়োগকর্তা তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, আর কোনো মেয়ে যেন সৌদি আরব না যায়। বলেন, দেশে ভিক্ষা করে খাব, তবু বিদেশ যাব না। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম তাদেরকে দেশে ফিরতে সহায়তা করেছে। সৌদি আরবের রিয়াদ ইমিগ্রেশন ক্যাম্প (সফর জেল) থেকে সরাসরি তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ফেরার অপেক্ষায় এখনো অনেক নারী অবস্থান করছেন বলে জানান ফিরে আসা নারীরা।

সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত এসব নারী নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় এসব নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

দেশে ফেরার পর তাদের ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হয়। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, অপ্রত্যাশিত কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মী সৌদি আরবের জেল থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরছেন। তাদের অধিকাংশই শুধু পরনের কাপড় নিয়ে দেশে এসেছেন। তিনি বলেন, মানবিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এসব নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াচ্ছে।

সৌদি ফেরত যুবকরা অভিযোগ করেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা করে নিয়ে তাদেরকে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাদের কাজ নেই, বেতন নেই, আকামা দেওয়া হয়নি। আবার অনেকের আকামা থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র কাজ করলেই পুলিশ ধরে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফিরে আসা যুবকরা ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন।

উল্লেখ্য, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন, যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসন প্রত্যাশী নারী শ্রমিকদের একা বিদেশে যেতে বাধা দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় মোট অভিবাসনের ১৯ শতাংশে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads