এই যে ভাই....
আপনে কি কবার পাইন, সিলিপ কই পামু ? প্রথমবার ভোটার হইলাম, ভোটটাই তো দিতে পাইল্যাম না। এক ঘণ্টা ধরে ঘুরতাছি। ভোটার কাট (কার্ড) নিয়া গেলাম স্যারেরা কইল সিলিপ আনতে কিন্তু কাউরেই তো পাইতাছি না।
বেলা তখন সোয়া নয়টা। এভাবেই প্রতিবেদকের কাছে জিজ্ঞাসাসহ তার উদ্বেগের কথা জানাচ্ছিলেন তরুণ নাঈম। বয়স ২১। জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৬০০২২৫৫২৮৬। বাসা উত্তর শাহাজাহানপুর। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করেন তিনি। নতুন ভোটার হয়েছেন তিনি।
পাশেই আরেক মধ্য বয়সী নারী আইডি কার্ড নিয়ে ঘুরছিলেন। বিথি রানী সাহা, স্বামী লাভী রঞ্জন সাহা। ভোটার কার্ড নিয়ে চিৎকার করছিলেন। কাছে যেতেই চিৎকার করে বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। ভোট দিতে আসছি। কিন্তু ভোট দিতে পারি নাই। দুই ঘণ্টা ধরে এইখানে সেইখানে ঘুরতেছি। একজন বলে ভেতরে যান ভেতরে গেলে আরেকজন বলে বাইরে থেকে সিলিপ আনেন। বাইরে আসলে দেখি স্লিপ নাই। আমি এখন কার কাছে যাব। তাহলে কি ভোট দিতে পারব না? এর বিচার কে করবে?’ চিৎকারের এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন বিথী রানী সাহা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি কেন্দ্র থেকে চলেই গেলেন। সাংবাদিকদের দেখে স্লিপ বঞ্চিতরা একই অভিযোগ করেন। চিৎকার করে বলেন, ভোট দিবার পারি নাই। প্রধানমন্ত্রী বলছেন সবাই ভোট দেবেন আমিও তাই ভোট দিতে আসলাম। এখন শুনি আমার ভোট কোথায় তা এখানকার লোকজন জানেন না।
চিত্রটি ছিলো রাজধানীর শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাস মহিলা ডিগ্রি কলেজের। সংসদীয় আসন ঢাকা-৮। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এমন অভিযোগকারীর সংখ্যা বাড়ছিল। নাঈম, বিথি রঞ্জন সাহার মতো কয়েকশ’ ভোটারের জটলা বেধে যায়। ক্ষুদ্র ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এদিকে কেন্দ্রটির একপাশে নারী এবং আরেক পাশে পুরুষরা ভোট দিচ্ছিল। এই কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকালে ভোট শুরুর সময় কেন্দ্রে সামনে কিছু ব্যক্তি টেবিল চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন। তারা ভোটারদের ভোটার নম্বরের স্লিপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু আধাঘণ্টা পর তাদের সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয়। এতেই বিপাকে পড়েন সাধারণ ভোটাররা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মুখ্য কর্মকর্তা তুহিনুল ইসলাম এই কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। এ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এই কেন্দ্রের ভোটার ২২৭০ জন। যারা ভোটারদের স্লিপ দিচ্ছিলেন তারা না থাকায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ভাই আমি ভোটারদের ভোট নিচ্ছি, স্লিপ তো দেওয়ার দায়িত্বে না। এখনে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। তারা যে অভিযোগটা করছেন সেটা সমাধান আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ভোটারকেই তার ভোটার নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। তিনি যখন এসব কথা বলছিলেন তার সামনেই ভোট দিতে না পারা ভোটাররা বিক্ষোভ করছিলেন।
বেলা তখন সোয়া ১১টা। এই কেন্দ্রে সস্ত্রীক আসেন ঢাকা-৮ আসনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাস। তারা দুজনই এই কেন্দ্রের ভোটার। প্রার্থীকে সামনে পেয়ে ক্ষুব্ধ অনেকে ভোট না দিতে পারার অভিযোগ করছিলেন। এ সময় মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাস প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। তারা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ ভোটারসহ আমাদের কর্মীরা ভোট দিতে পারছেন না। এই প্রতিবাদে আমরাও ভোট দেব না। আমরা এভাবেই চলে যাচ্ছি। মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, তাদের সমর্থকদের অনেকে ভোট দিতে এসে দেখেন ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আমি চাই আমার ভোটটাও অন্যকেউ দিয়ে দিক। আমি ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছি। এটি প্রহসনের নির্বাচন অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কমিশন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এই কমিশন বোবা ও কালা। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে মির্জা আব্বাস কেন্দ্র ত্যাগ করেন। আর বেলা ১টার পর ভোট বঞ্চিতরা একেএকে চলে যান।
এই আসনের ১৮ নম্বর ভোট কেন্দ্র ফকিরেরপুল ওয়াসা ভবন। দুতলায় পুরুষ এবং নীচ তলায় নারী ভোটারদের ভোট গ্রহণ চলছিল। বেলা সাড়ে ৮টায় এই কেন্দ্রে দেখা যায় নৌকা প্রতীক ছাড়া কোন প্রতীকের এজেন্ট নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রিজাইটিং অফিসার ফজলুল হক (সিইও, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়) বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অন্য প্রতীকের এজেন্ট দেখছি না, তবে কেউ কোন অভিযোগও করেনি।
বেলা ২টা ২০ মিনিটে আরামবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় নারী ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের দু’তলা ও তিন তলায় ৫টি বুথ রয়েছে। পোলিং, সহকারী ও প্রার্থীদের এজেন্টরা ভোটারদের অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু নীচে শতাধিক ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। দায়িত্বরত মহিলা আনসার সদস্য ১০/১৫ মিনিট পরপর ২/৩ ভোটারদের ছাড়ছেন, বাকিদের আটকে রেখেছেন। জানতে চাইলে আনসার সদস্য বলেন, স্যারদের নির্দেশনা মেনেই ধীরে ধীরে ভোটার পাঠাচ্ছি। তাতে কি ৪টার মধ্যে ভোট নেওয়া সম্ভব হবে-প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটাতো জানিনা ভাই।