চোরবেক গাছে অগণিত ফলন হয়। এর ফল পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে এবং খেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘চরবেক গাছ’। এটি ডুমুর প্রজাতির একটি গাছ। গাছটির গোড়া থেকে অনেক উঁচু ডাল পর্যন্ত ফল ধরে। বিশেষ করে গোড়ার অংশে বেশি ফল ধরে। বৈশাখ-আষাঢ় মাসে এর ফল পরিপক্ব হয়। এর আরেক প্রজাতি আছে, যেটিতে সারা বছর ফল ধরে। এ গাছের ফলকে চাকমা ভাষায় ‘চোরবেক গুলো’ বলা হয়। তঞ্চঙ্গ্যারা বলে ‘চোবেক গুলো’ আর মারমারা বলে ‘সুদিচি’।
গাছটির ফল কেবল মানুষই খায় না, পশু-পাখিদেরও খুবই প্রিয়। ফলের ভেতর দানা দানা বীজের সঙ্গে এক ধরনের জেলি থাকে, যা খেতে খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু। বন্য প্রাণির মধ্যে হরিণ ও কাঠ বিড়ালীর এটি একটি আকর্ষণীয় খাবার। ফলের সময় হরিণ হরিণীরা ফল খেতে এ গাছের গোড়ায় ছুটে আসে। জনশ্রুতি রয়েছে, এ সুযোগে এক সময় শিকারিরা হরিণ শিকার করার জন্য এ গাছের গোড়ার সামান্য দূরে তৃণ লতা-পাতা দিয়ে আড়াল তৈরি করে সেখানে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকত। তারপর হরিণ ফল খেতে এলে শিকারিরা গুলি চালিয়ে জখম করত এবং ধরে নিয়ে যেত।
এ গাছটি খাল পাড়ের ঢালু জায়গায় বেশি জন্মায়। আকৃতিতে নিচের দিকে হেলানো বা বাঁকানো। অর্থাৎ, এ প্রজাতির প্রত্যেকটি গাছই হেলানো হয়। তবে গাছটির এ হেলানোর পেছনে চাকমা সমাজে একটি লোক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, যা এখনকার প্রজন্ম জানে না। জানা গেছে, পৃথিবীতে মানবজাতি বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের জোগান নিয়ে কার কী সামর্থ্য আছে তা যাচাই করা হয়েছিল। এ গাছটি তার ফল দিয়ে মানবজাতিকে মাত্র ছয় মাস খাদ্য জোগান দিতে পারবে বলে জানিয়েছিল। এতে মা-লক্ষ্মী অসন্তুষ্ট হয়ে এ গাছকে লাথি মেরেছিল। সেই লাথিতে গাছটি হেলে পড়ে যায় এবং তখন থেকেই গাছটি হেলে থাকে।
গোড়ায় সব সময়ই পানিযুক্ত স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকে বলে ধরে নেওয়া হয়। চরবেক গাছের জাতটি মাটিতে পানি ধারণ করে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পানি সরবরাহও করে। কিন্তু পরিবেশবান্ধব ও পানি সরবরাহকারী এমন উপকারী প্রজাতির গাছটি আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় পাহাড়ের প্রত্যেক ছড়া ও ঝিরিতে গাছটি চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। প্রকৃতি তথা জীবজগতের কল্যাণেই গাছটির সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধিতে আমাদের আন্তরিক হওয়া উচিত।