আলোচিত ছবি ‘গণ্ডি’ মুক্তি পেলেও আশানুরূপ দর্শক টানতে পারছেনা। তবে নতুন এ ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে আবার লাইমলাইটে নিয়ে এসেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। খোদ অপর্ণাও স্বীকার করেন এ কথা। বলেন, ‘ছবির গল্পটা আমাকে টেনেছে বেশি। গল্প বন্ধুত্ব নিয়ে। বন্ধুত্ব যে শুধু ইয়াংদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয়, সিনিয়রদের মধ্যেও হতে পারে সেটাই দেখানো হয়েছে। আমার চরিত্রটা একটু আলাদা। এখানে আমি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছি। এর আগে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় চলচ্চিত্রে তো নয়ই নাটকেও করেছি কি না মনে পড়ে না। খুব ভালো লেগেছে অভিনয় করে।’
অপর্ণার শুরুটা হয়েছিল মঞ্চ দিয়ে। সেই ছোটবেলা থেকেই মঞ্চের সঙ্গে তার সখ্য। মঞ্চ অভিনেতা বাবা অলোক ঘোষের সঙ্গে নিয়মিত মঞ্চে যাতায়াতের সুবাধে এক সময় মঞ্চকর্মী হয়ে যান। মঞ্চের পর অভিনয়ের দ্যুতি ছড়ান টেলিভিশন নাটকেও। সেখানেও সাফল্য তাকে ধরা দেয়। অনেক গুণী নির্মাতাদের নাটকে অভিনয় করেন নামিদামি তারকাদের সঙ্গে। অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজেও তারকা খ্যাতি পান। টিভি নাটকের গন্ডি পেরিয়ে নাম লেখান চলচ্চিত্রে। এখানেও প্রশংসিত হন তিনি। অভিনয় নৈপুণ্যতায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক স্তরে।
সিরিয়াস ও কমেডি সব ধরনের চরিত্রই মেলে ধরেন অনন্যরূপে। কখনো সরলা, কখনো চঞ্চলা আবার কখনো তাকে দেখা গেছে প্রতিবাদী নারী চরিত্রে। তবে প্রথমবারের মতো ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অপর্ণা। ফখরুল আরেফিন খান পরিচালিত সময়ের আলোচিত ছবি ‘গণ্ডি’তে তাকে দেখা গেল নেতিবাচক চরিত্রে। তার চরিত্রের নাম মিলি।
তবে কি একেবারেই খল অভিনেত্রী হলেন অপর্ণা! রওশন জামিল, সুমিতা দেবী কিংবা রিনা খানের মতো খল অভিনেত্রীদের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে? বিষয়টি আসলে তা নয়। ব্যাপারটি খোলাসা করে এ অভিনেত্রী বলেন, ‘নেগেটিভ চরিত্র হলেও একেবারে খল চরিত্রে নয়। আমাদের সমাজে বন্ধুত্ব কিংবা ভালোবাসার যে গন্ডি রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হয় ছবিতে। আমি এটার বিরোধিতা করি।’
এ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের গুণী অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ও কলকতার বরেণ্য অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। তাদের সঙ্গে অপর্ণার প্রথম অভিনয়। তাদের সঙ্গে কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘দুই বাংলার দুই বরেণ্যের অভিনয় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। অভিনয়ের বাইরেও তারা আমাকে সব সময় কাছে রেখেছেন। আমাকে নিয়ে খাইতে বসতেন, গল্প করতেন এক কথায় ক্যামেরার বাইরে কাছে কাছে রাখতেন। জুনিয়র হিসেবে সিনিয়রদের ভালোবাসার পুরোটাই পেয়েছি তাদের থেকে। সময়ের পরিবর্তনে যখন সিনিয়র হবো তখন আমার থেকেও জুনিয়ররা এমনটি পাবে।’
অপর্ণা প্রথম বড়পর্দায় অভিনয় করেছিলেন ২০০৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্রে। এরপর ২০১৩ সালে ‘মৃত্তিকা মায়া’, ২০১৪ সালে ‘মেঘমল্লার’, ২০১৫ সালে ‘সুতপার ঠিকানা’, ২০১৬ সালে ‘দর্পণ বিসর্জন’ ও ২০১৭ সালে ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ‘মৃত্তিকা মায়া’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন এ অভিনেত্রী।
অপর্ণার হাতে রয়েছে নতুন একটি ছবি। ছবির নাম ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সরকারি অনুদানের এই ছবির কিছু অংশের শুটিং হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। পরিচালনা করছেন হোসনে মোবারক রুমি। ছবিটি নিয়ে অপর্ণা বলেন, ‘আমার অভিনীত সবগুলোই ভিন্ন ঘরানার। গল্পেও ভিন্নতা। একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া’ ছবিটিও তাই। মাত্র দুদিন শুটিং করেছি। আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুটিং শুরু হবে।’ চলচ্চিত্রে ব্যস্ততার কারণে এখন আর আগের মতো টিভি পর্দায় ছবি দেখা হয়ে ওঠে না এই অভিনেত্রীর। চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনয় করেন নাটকে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আরটিভিতে শুরু হয়েছে ধারাবাহিক নাটক ‘তোলপাড়’। এতে অভিনয় করেছেন অপর্ণা। নাটকটি নিয়ে অপর্ণা বলেন, ‘নাটকে নতুনত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। মেয়েদের একটি হোস্টেলকে কেন্দ্র করেই এর গল্প। হোস্টেলে থাকা মেয়েদের নানা ক্রাইসিস তুলে ধরা হয়েছে। এতে আমি চট্টগ্রাম থেকে ওই হোস্টেলে আসি। কিন্তু আমি একটু বাটপার টাইপের মেয়ে।’ অপর্ণা বরাবরই অভিনয় করেন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। নিত্যনতুন চরিত্রে মেলে ধরছেন নিজেকে। দর্শকরাও তাকে বৈচিত্রের অভিনেত্রী মনে করেন।
টিভি নাটকের পাশাপাশি অপর্ণা মঞ্চে এখনো সরব। তবে ঢাকার মঞ্চে অভিনয় করেন না বলেই তা প্রকাশ হয় না। এখনো তিনি চট্টগ্রামের ‘নান্দীকার’ নামে নাট্য সংগঠনের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেন। সম্প্রতি ‘কোর্টমার্শাল’, ‘জ্ঞানবৃক্ষের ফল’ ও ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ ‘নান্দীকার’ ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ডিসেম্বরে মঞ্চে উঠেন এই অভিনেত্রী।





