বাংলাদেশের খবর :: একান্ত সাক্ষাৎকার
অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম :
ড. মো. ফখরুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক। সাবেক ডিন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে জাপানের সুকুবা বিশ^বিদ্যালয়ে মনবুশো স্কলারশিপে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর আমেরিকার অ্যারিজোনার আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব সোভারিন নেশনস থেকে এমবিজিপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি লালমনিরহাট জেলা সদরের হিরামানিক গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লেখেন। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সঙ্কটের নানামুখী বিশ্লেষণ উঠে আসে তার জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণে। তিনি একান্তে কথা বলেন বাংলাদেশের খবর-এর সঙ্গে। এ সময় উঠে আসে কালো টাকা সাদা করণসহ সমসাময়িক প্রসঙ্গ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক মোবারক হোসেন
বাংলাদেশের খবর : কালো টাকা প্রতিবারই বাজেটের আগে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়- বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি একটি বিতর্কিত ও বহুল সমালোচিত বিষয়। কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করতে চায়। কালো টাকা অর্থনীতির বাইরে না রেখে তা সাদা করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে পুনঃপ্রবেশ করানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় কালো টাকা সাদা করার জন্য করদাতাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান করতে হয়। প্রতি বছর এটি সরকারের আয়ের একটি উৎস হয়ে থাকে।
সাধারণত কোনো দেশের সরকার মনে করে কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে প্রচলিত কালো টাকার পরিমাণ কমানো সম্ভব। এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা সরকারকে নানমুখী পরামর্শ ও চাপ দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণ করেন। কারণ এটি তাদের টাকাকে বৈধ এবং নিরাপদ করে তোলে।
তবে, এটি অনেকের কাছে নৈতিকভাবে আপত্তিকর, কারণ এটি কর ফাঁকির কারণে কালো টাকা জমাকারীদের পুরস্কৃত করার শামিল। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া একটি জটিল বিষয়, যার পক্ষে এবং বিপক্ষে উভয় দিকেই কিছু শক্ত বক্তব্য শোনা যায়।
আমার মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আগে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা মানুষের আর্থিক দুর্নীতি ও নৈতিকতার অবক্ষয়কে নিয়মিতভাবে আরো বেশী প্রণোদনা দানের বড় উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের খবর : কালো টাকা মানে অঘোষিত আয়ের জমানো অর্থ। এই অর্থ উন্নয়নের কাজে আসলে রাষ্ট্রের কাজে আসে- এমন যুক্তি নেতিবাচক বলবেন কী?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা হতে পারে, তবে এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে। কালো টাকা সাধারণত কর ফাঁকি দিয়ে অর্জিত হয়। যখন এই টাকাকে বৈধ করা হয়, তখন কর ফাঁকিদাতারা যেন পুরস্কৃত হন এবং যারা সঠিকভাবে কর প্রদান করেছেন তারা বঞ্চিত হন। এটি নৈতিকতা এবং ন্যায্যতার প্রশ্ন তোলে।
কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর আদায়ের হার বৃদ্ধি করতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে কর-ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। লোকেরা হয়তো মনে করতে পারে যে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ ভবিষ্যতেও আসবে, তাই তারা নিয়মিতভাবে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বজায় রাখতে পারে।
এটি বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনাকারীদের জন্য এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বৈধভাবে কর প্রদানকারীরা অনুভব করতে পারেন যে, তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। কারণ, কর ফাঁকিদাতারা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে থাকেন।
কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক স্তরে দুর্নীতির আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা এই সুযোগের অপব্যবহার করে থাকেন।
কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে অর্থনীতি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা উপকৃত হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কালো টাকার পরিমাণ বেশি হলে অর্থনীতির একটি বড় অংশ অনিয়ন্ত্রিত থেকে যায়, যা অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া সমাজে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি করতে পারে। এটি সামাজিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আইন মেনে চলার প্রণোদনা কমাতে পারে।
ফলে, কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কিছু সুযোগ সৃষ্টি হলেও, এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ কর-ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত কর আদায় ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি।
বাংলাদেশের খবর : আপনার চিন্তার পরিধিতে কালো টাকা সৃষ্টির মূল উৎসগুলো কী কী?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : আমাদের দেশে কালো টাকার সৃষ্টির মূল উৎস অনেক। কর ফাঁকি, অবৈধ ব্যবসা, যেমন- মাদক, অস্ত্র, চোরাচালান, মানব পাচার ইত্যাদি; সরকারি-বেসরকারি খাতে দুর্নীতি এবং ঘুষের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ, যা সাধারণত গোপন রাখা হয় এবং এর কোনো বৈধ নথি থাকে না।
এছাড়া, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে অবৈধ লেনদেন; যেমন- জমি, বাড়ি বা অন্যান্য সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে প্রকৃত মূল্য গোপন করে দলিলে কম মূল্য দেখানো হয় এবং বাকি অর্থ কালো টাকায় পরিশোধ করা হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করা হয়, যা প্রায়শই কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। এই অর্থ কালো টাকায় পরিণত হয়। বাজারে মজুতদারি ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা পণ্যের মজুতদারি করে বা সিন্ডিকেট গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে বাড়তি মুনাফা অর্জন করেন। এই বাড়তি আয় করবিহীন থাকায় কালো টাকা হিসেবে গণ্য হয়।
মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে বিনিয়োগ বা সঞ্চয় করা হয়। এই অর্থের কোনো বৈধ হিসাব না থাকায় এটি কালো টাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা বা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্থপাচার করা হয়; যার ফলে এসব অর্থ কালো টাকায় পরিণত হয়।
বাংলাদেশের খবর : কালো টাকা বৈধকরণের কর ১৫ শতাংশ, বিপরীতে বৈধ আয়ের ওপর কর ৩০ শতাংশ- রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের এ বিষয়টির অসঙ্গতি ব্যাখ্যা করুন?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশে কালো টাকা বৈধকরণের কর ১৫ শতাংশ এবং বৈধ আয়ের ওপর কর ৩০ শতাংশ। এই বিষয়টি আরো বেশি অসঙ্গতি ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কারণ, বৈধ উপায়ে আয় করা ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশ কর প্রদান করতে হয়, অথচ যারা কালো টাকা সাদা করতে চান তাদের শুধু ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়। এটি নৈতিকতা ও ন্যায্যতার পরিপন্থি।
নিয়মিত করদাতারা যদি দেখতে পান যে, কর ফাঁকিদাতাদের কম হারে কর দিতে হচ্ছে; তাহলে তারা ভবিষ্যতে কর ফাঁকির দিকে ঝুঁকতে পারেন, যা রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বৈধ উপায়ে আয় করা ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন যে, তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং তাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। কালো টাকা সাদা করার কম কর হার নির্ধারণ আইন লঙ্ঘনকারীদের পুরস্কৃত করার সমতুল্য হতে পারে। এটি কর ফাঁকি দেওয়ার একটি প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে এবং কর ফাঁকিদাতারা তাদের কর্মকাণ্ডে নিরাপদ বোধ করতে পারেন।
তা ছাড়া এটি সুষ্ঠ কর-ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা কমাতে পারে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কম কর হারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অন্য দেশগুলোতে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে দেখা হতে পারে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা প্রেরণ করতে পারে।
বাংলাদেশের খবর : এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেশের বৈধ করদাতাকে আরো বেশি নিরুৎসাহিত করবে এবং সামাজিক ভাঙনকে আরো ত্বরান্বিত করে তুলবে- প্রসঙ্গটি বিশ্লেষণ করবেন কি?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেশের বৈধ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং সামাজিক ভাঙনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কারণ, এদেশে বৈধ করদাতারা তাদের আয়ের সঠিক ঘোষণা দিয়ে বেশি কর প্রদান করছেন, অথচ যারা কালো টাকা সাদা করছেন তারা কম কর প্রদান করছেন।
এতে তারা ভবিষ্যতে কর ফাঁকির পথে যেতে উৎসাহিত হতে পারেন। এটি দীর্ঘমেয়াদে কর আদায়ের হার কমিয়ে দিতে পারে এবং সরকার রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হতে পারে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে এটি সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটাতে পারে। এর মাধ্যমে আইন মেনে চলার প্রণোদনা কমে যায় এবং অবৈধ উপায়ে আয় করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় যা সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে সামাজিক ভাঙন ত্বরান্বিত করতে পারে। এই ধরনের সামাজিক ভাঙনের প্রেক্ষাপটে কালো টাকা সাদা করার নীতি ইতিবাচক না হয়ে বরং আরো প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে।
বাংলাদেশের খবর : কালো টাকার উপার্জন অনৈতিকতার পথে; যেখানে সততা প্রশ্নবিদ্ধ। এটাকে কি রাষ্ট্র বৈধতা দিতে পারে? এই ধরনের উপার্জনে করারোপ বিশে^র কোনো দেশে আছে কি?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : কালো টাকার উপার্জন অনৈতিক এবং তা অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ। এটি সততা এবং নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া বৈধ করতে রাষ্ট্র যে সুযোগ দেয়, তা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কিত। রাষ্ট্রের এরূপ বৈধতা দেওয়াটা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। কালো টাকার উপার্জন অনৈতিক এবং অবৈধ হওয়ায় এটাকে বৈধতা দেওয়া অনেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এটি আইন মেনে চলা এবং সৎভাবে আয় করা ব্যক্তিদের প্রতি অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিভিন্ন দেশে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান, তবে তা অনেক বিতর্কিত এবং সমালোচিত। যেমন, ভারত বিভিন্ন সময়ে কালো টাকা ঘোষণার সুযোগ দিয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা যায়। ২০১৬ সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নোটবন্দির ঘোষণা দেন যা কালো টাকার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ ছিল। এছাড়া, ২০১৭ সালে কালো টাকা ঘোষণা স্কিমের অধীনে ৪৫ শতাংশ হারে কর প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়া ২০১৬-২০১৭ সালে ট্যাক্স অ্যামনেস্টি প্রোগ্রাম চালু করেছিল, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করে কালো টাকা বৈধ করা যেত। এই প্রক্রিয়ায় ২-৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য বিভিন্ন ডিসক্লোজার ফেসিলিটিজ প্রদান করে, যেখানে কর ফাঁকির পরিমাণ ঘোষণা করে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করা যায়। এটি একটি সিস্টেম, যেখানে অতীতে কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের কর প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়। ইতালি ২০১৫ সালে ভোলেন্টারি ডিসক্লোজার প্রোগ্রাম চালু করেছিল, যেখানে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করে কালো টাকা বৈধ করা যেত।
যদিও কিছু দেশে এটি রাজস্ব বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির বৈধতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে এটি নৈতিকতা, ন্যায্যতা এবং আইন মেনে চলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তারাও এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত। সরকারগুলোর উচিত কর নীতি এবং আইন ব্যবস্থাকে এমনভাবে প্রণয়ন করা যাতে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে মানুষ সব ধরনের আয় সঠিকভাবে ঘোষণা ও প্রদর্শন করতে উৎসাহিত হয় এবং সঠিকভাবে নিজ নিজ কর প্রদান করতে সচেষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারগণ নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং এসব বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করার আইটি দক্ষতা ও সময় তাদের নেই। ফলে সরকারের প্রাপ্য করের টাকা ঠিকমতো আদায় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। যা কিছু আদায় হয় সেটার বড় ধরনের নয়ছয় ঘটার উদাহরণ আমরা প্রায়ই পত্রিকায় দেখে বিস্মিত হই।
বাংলাদেশের খবর : যদি বলা যায়, কালো টাকার মালিকরা সরকার ঘরানার অনুগ্রহ প্রাপ্ত- তাহলে বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখবেন?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : কালো টাকার মালিকরা যদি সরকার ঘরানার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হন, তাহলে এটি একটি গভীরতর সমস্যা নির্দেশ করে। কালো টাকার মালিকরা যদি সরকার বা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হন, তাহলে তারা বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন। এটি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং অনৈতিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
এ ধরনের পরিস্থিতি ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো আইন ও নৈতিকতার বাইরে গিয়ে সুবিধা পেয়ে থাকে। কালো টাকার মালিকদের অনুগ্রহ প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসনিক দুর্নীতির প্রসার ঘটে। কর্মকর্তারা অনেকাংশে রাজনৈতিক চাপে বা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহায়তা করেন।
কালো টাকার মালিকদের সরকার ঘরানার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হওয়া সমাজ, অর্থনীতি এবং রাজনীতির জন্য বিপজ্জনক। এটি ন্যায্যতা, সুশাসন এবং নৈতিকতার পরিপন্থি এবং সমাজে গভীর অসন্তোষ ও বৈষম্য সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে অতি ধনী ও অতি গরিব মানুষের সংখ্যা ও জীবনযাপনের মানের প্রশ্নে সামাজিক ন্যায়বিচারহীনতা বহুলাংশে দায়ী।
কারণ, সরকার ঘরানার অনুগ্রহপ্রাপ্ত হলে আইন প্রয়োগ শিথিল হতে পারে, যা দুর্নীতি এবং অবৈধ কার্যক্রমের বৃদ্ধি ঘটায়। কালো টাকার মালিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সৎ ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রতি অন্যায় করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোনো মেগা দুর্নীজিবাজকে বারবার শ্রেষ্ঠ করদাতার পুরস্কার দেওয়া হলেও সেখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি লক্ষণীয়। শ্রেষ্ঠ করদাতার পুরস্কারপ্রাপ্তরা সরকারি অনুকম্পা নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় বিফল হলে দেশ থেকে গোপনে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন- দেশে এমন ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়!
বাংলাদেশের খবর : প্রতি বছর টাকা সাদা করার ঘোষণা দেওয়াটা দেশের মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক- এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : প্রতি বছর কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেওয়াটা দেশের মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ মুসলিম। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, আয় ও সম্পদ সৎ এবং ন্যায়সঙ্গত পথে অর্জন করতে হবে। কালো টাকা, যা অবৈধ বা অনৈতিকভাবে অর্জিত, তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম এবং এ ধরনের অর্থ গ্রহণ বা বৈধকরণ সমর্থনযোগ্য নয়।
আমাদের দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন সাধারণত নিষ্ঠা, সততা ও ন্যায্যতার ওপর জোর দেয়। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া এসব মূল্যবোধের বিপরীত, কারণ এটি অবৈধ আয়ের বৈধতা প্রদান করে, যা সততা ও নৈতিকতার পরিপন্থি। নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো ন্যায্যতা ও সততা। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া সেই ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করে, যারা কর ফাঁকি দিয়েছেন বা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। এটি নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কারণ এটি সৎ ও নিয়মিত কর প্রদানকারীদের প্রতি অন্যায়। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া অবৈধ কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়, এটি সমাজের নৈতিক মানদণ্ডকে নষ্ট করতে পারে এবং আইন মেনে চলার প্রবণতা কমিয়ে দিতে পারে।
সরকার যখন বারবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, তখন এটি সরকারের নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে। সাধারণ মানুষ সরকারের নীতি এবং তার ন্যায্যতা নিয়ে সন্দিহান হতে পারেন। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি ভুল বার্তা পাঠায় যে, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন করাও গ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশের খবর : লাগামহীন দুর্নীতি কমানোর জন্য জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি যে জোর প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত তার বিপরীত- আপনি কী মনে করেন?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশে লাগামহীন দুর্নীতি কমানোর জন্য জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি জোর প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কালো টাকার সাদাকরণ দুর্নীতি কমানোর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। জিরো টলারেন্স নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতি প্রতিরোধ করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও নৈরাজ্য কমানো। কিন্তু এ দেশে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার আগেই ঘটছে উল্টোরথ।
আমি এর পূর্বে একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, এখানে আবারো বলছি- প্রতি বছর কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা বাংলাদেশের দুর্নীতি কমানোর জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং নীতিগত স্থিতিশীলতার পরিপন্থি। এটি কালো টাকার মালিকদের জন্য সুবিধা প্রদান করে, সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটায়। তাই সরকারের উচিত দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগের পরিবর্তে আরো স্বচ্ছ ও কার্যকর কর-ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।
বাংলাদেশের খবর : ‘দুর্নীতি-অনিয়মের সবচেয়ে বড় উৎস হলো আমাদের দেশের ক্ষমতার রাজনীতির ধরন- যার মূল ভিত্তি হলো বিভিন্ন অনুগত স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা বিতরণ’- আলোচনা করুন।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশের দুর্নীতি এবং অনিয়মের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ক্ষমতার রাজনীতির ধরনকে উল্লেখ করা হলেও এর পেছনে কিছু মূল কারণ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ক্ষমতার রাজনীতি এবং এতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা বিতরণের বিশ্লেষণ করতে গেলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করতে হবে। যেমন- ক্ষমতা যখন কেন্দ্রীভূত থাকে, তখন সারা দেশে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে। ক্ষমতার রাজনীতিতে বিভিন্ন স্তরের নেতারা তাদের অনুসারীদের পুরস্কৃত করতে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। এতে তাদের আনুগত্য বজায় থাকে এবং ক্ষমতা ধরে রাখা সহজ হয়।
ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের অনুগতদের প্রভাবশালী পদে বসানোর মাধ্যমে প্রতিদান দেন। এর ফলে দুর্নীতি ও অনিয়মের পরিসর বাড়ে। রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সুযোগ-সুবিধা বিতরণ করা হলে প্রশাসনিক কার্যক্রমে দক্ষতা ও স্বচ্ছতার অভাব ঘটে। এটি দুর্নীতির একটি বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায়।
রাজনৈতিক নেতারা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সরকারি সম্পদ বণ্টন করেন, যা অপচয় ও দুর্নীতির কারণ হয়। সরকারি প্রকল্প ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা তাদের অনুগতদের অবৈধভাবে সুযোগ করে দেন। এটি দুর্নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্বচ্ছ না হলে দুর্নীতির পরিসর বাড়ে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে অন্যায় সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হন। ক্ষমতার রাজনীতিতে জবাবদিহিতা না থাকলে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা শাস্তি এড়িয়ে চলতে পরেন এমনকি বিনা বাধায় গোপনে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেন। এতে মেগা-দুর্নীতির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বিচার ব্যবস্থা এবং আইন প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে দুর্নীতির বিচার সঠিকভাবে হয় না। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা দুর্নীতি করেও শাস্তি থেকে রেহাই পান।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে শিথিলতা দেখা যায়, যা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। এভাবে সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস কমে যায়। তারা মনে করে যে ক্ষমতাসীনরা শুধু তাদের নিজস্ব স্বার্থে কাজ করে। ক্ষমতার রাজনীতিতে সুবিধা পেতে মানুষ অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারেন, যা সমগ্র অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়।
বাংলাদেশের খবর : আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা যেভাবে চলছে, তাতে সাধারণ মানুষ এর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না- আপনি কী মনে করেন?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : এই উত্তর খুবই স্পর্শকাতর। বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার অবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর আস্থা কমে যাওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ, বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, ব্যবসায়িক স্বজনপ্রীতি, অবৈধতা, সুষ্ঠু বিচারের অভাব, ও রাজনৈতিক করুণা, চাকরিতে ঘুষ, লবিং করে প্রমোশন জাতিকে ডুবাতে বসেছে। অযোগ্যরা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খেয়ে যোগ্যদের জায়গা দখল করে নেওয়ায় পদে পদে হতাশা ও বৈষম্য বাড়ছে ও কর্মে শৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশের খবর : ব্যবসা সহজীকরণে বাধা হয়ে আছে দুর্নীতি। বাজেটে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এমন কোনো নীতিমালা দেখা যাচ্ছে না- আপনার কী ধারণা?
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার অবস্থা ও সাধারণ মানুষের ওপর কর প্রদানের ওপর আস্থা রাখতে না পারার কারণ হতে পারে একাধিক। বাংলাদেশে আর্থিক অসমতা এবং সামাজিক ভেদাভেদ বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আশা কমিয়ে দিয়েছে। সরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অনৈতিক চাপ অথবা কিছু কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যম তথা পার্টি পত্রিকা, টিভি-র একপেশে প্রচারণার দৌরাত্ম্য চোখে পড়ার মতো। যারা কোনো দুর্যোগের দিনে সাধারণ বন্যাক্রান্ত জনগণের দুর্দশার কথা প্রচারের চেয়ে পার্টির মঞ্চে কয়জন নেতার ছবি টানানো আছে, সেই সংবাদ প্রচারে বেশি সময় ব্যয় করতে পছন্দ করে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র ও সমাজের হিতকর মূল্যবোধ-ব্যবস্থা চাটুকারিতায় পর্যবসিত হয়ে পড়ায় সাধারণ জনগণ অনেকটা বিভ্রান্ত। তারা রাষ্ট্রীয় কর প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে না কেন?
বাংলাদেশের খবর : এ পরিস্থিতিতে সম্পদের অসম বণ্টন বাড়ে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৎ করদাতারা বঞ্চিত হন- বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : ব্যবসা সহজীকরণের জন্য সরকারি কার্যকরী প্রকল্পের অভাব ও দুর্বল সরকারি প্রকল্পের বাহুল্য থাকায় এ পরিস্থিতিতে সম্পদের অসম বণ্টন বাড়ছে। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার হানি ঘটছে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি, সৎ করদাতারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতি সময়কালে অস্থিতির মূল উপাদানগুলো অনেকটাই ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত ব্যয়ের তারতম্য ও সার্বিক ব্যয়ের অন্যতম কারণ হতে পারে। ব্যাংকিং সেক্টরে নানামুখী ধস, অর্থনীতির অবনতি হওয়া এবং তথ্য প্রযুক্তিতে যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাবে দুর্বল অপারেশন, নিরাপত্তার অনিশ্চয়তা ডিজিটাল সেবার মান দিন দিন নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। মানুষ সেবা নিতে চেয়েও দুর্বল ও নিরাপত্তাহীন সেবার ভয়ে আতঙ্কে ভুগে ব্যাংকিং সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘরে ঘরে সিন্দুক কিনে টাকা জমা করছে। এ পরিস্থিতিতে সম্পদের অসম বণ্টন ও অনৈতিক লেনদেন বাড়ছে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। এসব টাকা গোপনে ব্যবসায় ব্যবহৃত হলেও তার মুনাফার ওপর কর বসানো সহজ নয়। এর ওপর বাজেটে কোনো সংস্কারনীতি বা আলোকপাত নেই। এসব কথা পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। অথচ, কোথাও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই!
বাংলাদেশের খবর : সাক্ষাৎকারে দীর্ঘ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. মো. ফখরুল ইসলাম : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।